Chapter 13 | Part 2

85 3 1
                                    

রাতে বিছানায় শুয়ে সোনালি সেদিন অনেক রাত অবধি জেগে ছিল। ঘুম আসছিল না তা নয়, কিন্তু নির্বাণ হাতের কাছে না থেকেও যে আছে--সেই অপূর্ব অনুভূতি নির্জনে অন্ধকার রাতে একা একা উপভোগ করছিল। একা হলেই সাধারণত যত রাজ্যের জঞ্জাল এসে মাথায় জড়ো হয়, কিন্তু সেদিন তা হয়নি, বরং ভবিষ্যতের দিনগুলো কল্পনা করে শরীর মন শিহরিত হয়ে উঠেছিল।

সোনালির অভ্যাস অনেকগুলো বালিশ নিয়ে শোয়া। মাথায়, পায়ের নিচে ছাড়াও এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকে নানা সাইজের কুশান। একটা বালিশ বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, তাদের বেডরুম কিভাবে সাজাবে মনে মনে তার পরিকল্পনায় মশগুল হয়ে গেল। শোবার ঘরের সাথে অবশ্যই থাকতে হবে বারান্দা। সেখানে দু'জনে অনেকটা সময় কাটাবে। সারাদিন কার কিভাবে কাটল তার বিস্তৃত বর্ণনা দেবে এবং শুনবে।

চাঁদের আলোয় দু'জনে মুখোমুখি বসে আছে--এই দৃশ্য কল্পনা করতেই শরীরে তরঙ্গ খেলে গেল। বালিশে মুখ গুঁজে সোনালি লজ্জায় লাল। মনে মনে ঠিক করল--পরের সপ্তাহে একসাথে বসে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলবে। প্রথমে ফ্ল্যাট ভাড়া নেবে, বছর দুয়েক পর পছন্দসই একটা ফ্ল্যাট কিনবে।

নির্বাণের দিন কাটছে ঝড়ের গতিতে। কখন যে সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে রাত হয়ে যায় তার হদিশ পায় না। অফিসে কাজের চাপ ক্রমশই বাড়তে লাগল। এখন শুধু ইকুইটি মার্কেট নয় তার সাথে যোগ হয়েছে কমোডিটি এবং ফোরেক্স মার্কেট। সারা পৃথিবীর বাজারের খবর রাখতে গিয়ে নিজের ঘনিষ্ঠদের খবর রাখা হয়ে উঠছে না। বাড়ি ফিরছে রাত দশটায়। কিছুদিন আগেও রোজ অফিসের পর সোনালির সাথে দেখা করত, কখনো সোনালিদের বাড়িতে বা অন্য কোথাও, কিন্তু এখন আর সে অবসর নেই। বাড়ি ফিরতেই শুরু হয়ে যায় ক্লায়েন্টদের ফোন--অনন্ত প্রশ্ন। কেউ প্রয়োজনে আবার কারও বা নেহাতই টাইমপাস।

কর্পোরেট অফিসে কাজের সময়সীমা উঠে গিয়েছে অনেক দিন আগেই, অন্তত ভারতবর্ষে। বিশ্বের দরবারে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে মানুষ বদ্ধপরিকর। কাজের গতির সাথে সঙ্গতি রেখে যে চলতে পারবে সে স্মার্ট, বাকীরা ত্যাজ্য বলেই পরিগণিত হয়। কে কোন খবর কত তাড়াতাড়ি জনসমক্ষে নিয়ে আসতে পারে প্রতি নিয়ত চলছে তার প্রতিযোগিতা। মুহূর্তের আলস্যে পিছলে যেতে পারে কোন টাটকা সংবাদ, যার পরিণাম--বিনা প্রতিবাদে হাতছাড়া হতে পারে বহু আকাঙ্ক্ষিত চাকরি, বা আটকে যেতে পারে পদোন্নতি--কাজেই সাবধান। শ্লথ হলেই পিছিয়ে পড়ার ভয়, অতএব গতির সাথে তাল মিলিয়ে বোধ বুদ্ধি জলাঞ্জলি দিয়ে মাথা হেঁট করে দৌড়ে যাওয়াই রীতি।

Khelaghar | খেলাঘরHikayelerin yaşadığı yer. Şimdi keşfedin