ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো ফানুসের মতো উড়ে যাওয়ায়, নির্বাণের অসহায় মন সান্ত্বনার আশায় হাত বাড়িয়েছে স্মৃতির দুয়ারে। কলেজে সোনালির সাথে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে--এমন দিন খুব কমই গিয়েছে যে তাদের পরস্পরে দেখা হয়নি। কৃতিত্ব অবশ্য একশোভাগ সোনালির, যেভাবে হোক দেখা করত। যেদিন দেখা হবার কোনও সম্ভাবনা ছিল না, সেদিনও সে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করত যে দেখা হতেই হবে, এবং শেষপর্যন্ত তাই হতো। কলেজে শেষদিনের অভিজ্ঞতা নির্বাণ কখনো ভুলতে পারবে না। একটা শুক্রবার ক্লাসের পর তাদের ব্যাচের কলেজের দিন শেষ বলে ঘোষণা করে দেওয়া হল; সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। নির্বাণদের ব্যাচে সবারই মন খারাপ, আবার কবে বন্ধুদের সাথে দেখা হবে তার প্রতীক্ষা।
সোনালি হঠাৎ নির্বাণকে বলল, "আজকের দিনটা খুব স্পেশাল, তাই না?"
নির্বাণ সাথে সাথে বলল, "ঠিক বলেছ।" দুটো হাত মুঠো করে অঙ্গভঙ্গি করে বলল, "আজ এমন কিছু করা দরকার যাতে দিনটা জীবনভর মনে থেকে যায়।"
সোনালি উত্তেজিত কণ্ঠস্বরে জবাব দিল, "একদম ঠিক, বিশেষ কিছু করতে হবে।" আবেগতাড়িত স্বপ্নালু দৃষ্টিতে নির্বাণের চোখে চোখ রেখে বলল, "আচ্ছা নির্বাণ, তুমি আমায় চুমু খেতে পারবে?"
নির্বাণ সেই মুহূর্তে এত অবাক হয়ে গিয়েছিল যে বেশ কিছুক্ষণ সোনালির প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। বিস্ময়ের সাথে তার দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিল, যেন সৌরজগত থেকে অবিশ্বাস্য কোন প্রস্তাব এসেছে।
সোনালি উত্তরের অপেক্ষা না করে নির্বাণের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিল কলেজের তিনতলায়, তাদের ক্লাসরুমে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কলেজের গেটে কেউ কেউ তখনও আড্ডার আনন্দে বিভোর। কলেজের মায়া কাটিয়ে কিছুতেই মন যেতে চাইছে না।
সোনালি বরাবরই মুখ্য ভূমিকায়--তখনও তাই। দেওয়ালে পিঠ দিয়ে নির্বাণকে দাঁড় করিয়েছে, ছ-ইঞ্চি দূরত্বে সোনালি। উত্তেজনায় দু'জনেই হৃদয়ে মৃদু কম্পন অনুভব করছে, বুঝতে পারছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। নির্বাণ স্থির দৃষ্টিতে সোনালির চোখের দিকে তাকিয়ে, হাত-পা প্রায় অবশ। আগে কখনো এই ধরণের অভিজ্ঞতা হয়নি, কাজেই একটু নার্ভাসই লাগছে, আবার কোনভাবে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ না পেয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। দু'জনেরই ঘন ঘন শ্বাস পড়ছে, তার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে সারা শরীরে। অদ্ভুত উন্মাদনা। কলেজ, ক্লাসরুম, তিন বছরের স্মৃতি সব দলা পাকিয়ে নিমেষের মধ্যে উধাও। সেই মুহূর্তে শুধুমাত্র নিজেদের অস্তিত্ব ছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ড লোপ পেয়েছিল।