নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, সর্বত্র আনন্দের ছোঁয়া। প্রকৃতিদেবী গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষ করে, বর্ষার ছোঁয়ায় ধরণীকে শান্ত করে, আস্তে আস্তে শিশির ভেজা চাদর বিছিয়ে দিচ্ছেন। রোদের রং পালটে গেছে। জলে হাত দিলে বোঝা যায় আগের চেয়ে অনেকটাই ঠাণ্ডা। ঋতু পরিবর্তন হচ্ছে, প্রকৃতির চাকা ঘুরছে। শরতের শেষ অর্থাৎ দুর্গাপুজোর ঢাকে কাঠি পড়েছে। পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলের প্রস্তুতি চলছে। স্কুল কলেজে ছাত্রছাত্রীরা ছুটির অপেক্ষায় দিন গুনছে। ব্যবসায়ীরা তো বসেই আছেন পসরা সাজিয়ে শুভক্ষণের জন্য। সব মিলিয়ে সাজ-সাজ রব।
উৎসবের মেজাজ সোনালি-নির্বাণদের কলেজেও। আর ক'দিন পরেই পূজার ছুটি পড়ে যাবে। লেখাপড়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ, কলেজের ক্লাস রুম খালি কিন্তু তার সাথে সাথে কমনরুমের আড্ডাও বন্ধ। বন্ধুদের সাথে আর রোজ দেখা হবে না ভাবতেই অনেকেরই মন ভারাক্রান্ত। সোনালি তাদের একজন। অনেক পরিকল্পনা হচ্ছে পুজোয় ঠাকুর দেখা নিয়ে, কতবার লিস্ট তৈরি হল আর ছেঁড়া হল তার ঠিক নেই। সোনালি থেকেও নেই, ভাবছে ঠাকুর দেখা তো দু-দিনের ব্যাপার, তারপর? বাকী দিনগুলো কি নির্বাণের সাথে দেখা হবে না? মন মানতে নারাজ, উপায় একটা বার করতেই হবে। নির্বাণকে সারাদিনে একবার না দেখলে সোনালির দিন শেষই হবে না। একটাই চিন্তা, কি করে নির্বাণের সাথে রোজ দেখা করা যায়? অবশেষে সমাধান সূত্র বেরুল। সোনালিরা যে কমপ্লেক্সে থাকে সেখানে বড় করে দুর্গাপুজো হয়, সারাদিন ধরে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া খুবই মজা হয়। সেই আড্ডায় নির্বাণকে জুড়ে দিতে পারলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। উত্তর খুঁজে পাওয়ায় সোনালি ফাঁপ ছেড়ে বাঁচল, মন খুশীতে ভরপুর সেই আবেশেই কমনরুমে সবার জন্য চা আর সিঙ্গারা অর্ডার করে দিল।
এতদিন অবধি সোনালির কাছে পুজো বলতে ছিল সকালে অঞ্জলি দিয়ে কাছাকাছি দু-একটা ঠাকুর দেখা, দুপুরে জমিয়ে খাওয়া আর প্রধান আকর্ষণ রাতে বাবা-মায়ের সাথে গাড়ি করে বিভিন্ন প্যান্ডেলে ঘোরা। এই প্রথম তার ব্যতিক্রম হতে চলেছে। সোনালি কলেজে পড়ছে, বন্ধুদের সাথে বেরুতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। সোনালির বাবা-মা খুব স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, সোনালিকে অনুমতি দিলেন তবে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত। মিসেস সান্যাল মেয়ের পূজার মজা আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেবার জন্য মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "চল, কাল তোকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দি, তাতে তোর খবরও নেওয়া যাবে আবার তুইও তোর বন্ধুদের সাথে ইচ্ছামত গপ্পো করতে পারবি।"