সন্ধ্যা আরও রঙিন করতে নির্বাণ ঘোষণা করল, "আজকের পার্টীর সাফল্যের চাবিকাঠি তুলে দেওয়া হল আমাদের দুই বন্ধুর হাতে। আমার বাঁ দিকে বিজয় নিগম, ডি.জে." করতালিতে হল মুখরিত। "আর ডান দিকে মনিষ যার ওপর আমাদের সবার মনের ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব অর্থাৎ মিক্সোলজিস্ট।" আবার করতালি।
নির্বাণের কথা শেষ হতেই বিজয় পকেট থেকে পেনড্রাইভ বার করে সিস্টেমে গুঁজে দিল, বেজে উঠল ইংরেজি গানের সুর। চেনা সুরের সন্ধানে মন সবসময় ঘুরতে থাকে, কাজেই বিজয় প্রথমেই সবার পরিচিত গান চয়ন করে উপস্থিত সকলের মন জয় করে নিলো। গানের মাঝে জুড়ে দিল নিজের দু-একটা কথা, যেমন--'লাভ ইউ ফোকস' বা 'এনজয়'...নিমেষে 'বার কাউন্টার'-এ লম্বা লাইন, হাতে হাতে তুলে দেওয়া হল প্রত্যেকের পছন্দের পানীয়। রাম, জিন, ভডকা, হুইস্কি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ককটেল।
'চিয়ার্স' শব্দের জাদু অনুরণিত হতে থাকল হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অ্যালকোহল আর কোলাহলের দারুণ মিশেলে জমে উঠল প্রথম বিবাহবার্ষিকীর পার্টী। প্রধান আড্ডা হলের মাঝখানে, তাকে ঘিরে ছোটো ছোটো দল ভাগ হয়ে গিয়েছে নিজেদের পছন্দের মানুষের সাথে। পারফিউমের আদুরে সুরভির আকর্ষণ, পানীয়ের রসায়ন, বাজনার মধুর ব্যঞ্জনা, আর আলোছায়ার হাতছানি মনের ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। কোথাও প্রেমালাপ, কোথাও 'রেপো রেট কাট', আবার কোনও কোণায় কেউ আবেগতাড়িত কণ্ঠস্বরে বর্ণনা করছে সদ্য দেখা সিনেমার ক্লাইম্যাক্স।
গরমাগরম স্ন্যাক্স বিতরণ করা হচ্ছে। মিটবল, ককটেল সসেজ, আর নির্বাণের ভীষণ পছন্দের পেঁয়াজি হাতে হাতে ঘুরছে। রাত ন'টা নাগাদ এলেন সোনালিদের ব্যাঙ্কের এক ক্লায়েন্ট, এন.জি.ও. সংস্থার দায়িত্বে আছেন, সুজাতা সরকার। সোনালিকে নিজের মেয়ের মতই স্নেহ করেন, তাই তার নিমন্ত্রণে সাড়া দিতে বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে। নির্বাণের সাথে সুজাতাদেবীর আলাপ করিয়ে দিয়ে সোনালি গেল মনিষকে উদ্ধার করতে। বারের সামনে বেশ ভিড়, বেচারা একা সামলাতে পারছে না। সোনালি নিয়ম পালটে দিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল, "এবার যে যার ড্রিঙ্ক নিজে ঢেলে নেবে, সব রাখা আছে।"