Chapter 6 | Part 1

112 8 0
                                    

নির্বাণের দাদা নির্মাল্য চার্টার্ড পাশ করে পাকাপাকিভাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। শুরুতেই পঁচিশ হাজার টাকা মাইনে পাচ্ছে, স্বভাবতই বাড়ির সবাই খুশী। তিন্নির সাথে নির্মাল্যর প্রেম নূতন জীবন ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত, যাবতীয় ভুল বোঝাবুঝির বোঝা থেকে মুক্তি পেয়ে দু-পক্ষই হালকা বোধ করছে। নির্বাণদের সংসারের উপর দিয়ে কম ঝড়ঝাপটা যায়নি, তাই বহুদিন পর বসন্তের বাতাসে সবাই তৃপ্ত। অনেক সংগ্রামের পর যখন ফল পাওয়া যায়, তখন তার স্বাদ মিঠে হতে বাধ্য।

শেষ কুড়ি-পঁচিশ বছর নির্বাণের বাবা, নরেন ব্যানার্জী, যেভাবে একহাতে রোজগার করে সংসারকে ধরে রেখেছেন তা অবশ্য প্রশংসনীয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হবে মলিনাদেবীর গুনের কথা, একনিষ্ঠতার কথা, উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সবার মুখে হাসি যুগিয়ে চলেছেন তিনি। এক মেয়ের বিয়ে দেওয়া আর তিন ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালানো সহজ কথা নয়। সংসারের যাবতীয় অসুবিধা, অসংগতি স্বামী-স্ত্রী সমানভাবে ভাগ করে নিয়েছেন কখনো তার আঁচ পড়তে দেননি ছেলেমেয়েদের উপর। চাহিদা যেখানে কম, সুখ সেখানে বাঁধা। নির্মাল্যের সাফল্যে সবচেয়ে খুশী বোধহয় ব্যানার্জী দম্পতি।

কিছুদিন আগেই পরিবারের সবাই চরম বিপর্যয়ের শিকার হয়েছিলেন নির্বাণের অসুস্থতায়। ডাক্তারের নির্দেশে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। সারাদিন হাসপাতাল চত্বরে অপেক্ষায় বসে থাকতেন, কখনো ভগবানের কাছে ছেলের প্রাণ ভিক্ষা করতেন, কখনো জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে জীবনকে দোষারোপ করে জীবন থেকে অব্যাহতি চাইতেন। পরিবারের কারও মুখে কথা ছিল না, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ডাক্তারদের হুকুম তামিল করার জন্যই যেন বেঁচে ছিলেন। সেদিনের কথা ভাবলে আজও মলিনাদেবীর হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। স্বামীর মুখে ছেলের অসুখের নাম শুনেই মেঝেতে বসে পড়েছিলেন, মুহূর্তের জন্য জ্ঞান হারিয়েছিলেন। সংজ্ঞা ফিরে পেতেই ছুটে ঠাকুরঘরে নিজের আসনে গিয়ে বসেছিলেন, জোড়হাতে প্রার্থনা করেছিলেন ছেলের আরোগ্যের জন্য। তাছাড়া আর করারই বা কি ছিল? এই অসুখের মোকাবিলা করবার ক্ষমতা কার আছে?

Khelaghar | খেলাঘরWhere stories live. Discover now