নির্বাণদের ব্যাচের ছেলেমেয়েদের মুড একেবারে পালটে গেছে, সামনে পার্ট-ওয়ান পরীক্ষা। কমনরুমে ভিড় আগের মতই আছে তবে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে নূতন ছেলেমেয়ের দল। সবাই খুব ভাল করে জানে পরীক্ষার ফলের উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতের সাফল্য কাজেই অবসরের অবকাশ নেই, সবাই নিজের পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত।
কলেজের পর প্রায় প্রতিদিনই নির্বাণ সোনালি একসাথে সোনালিদের বাড়িতে যায়। ওদের বাড়িতে বাড়তি সুবিধা ইন্টারনেট, দুনিয়া হাতের মুঠোয়। যে কোন সংশয়ের উত্তর এক সেকেন্ডে মজুত। নির্বাণের মন মাঝেমাঝেই পরীক্ষার সিলেবাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে ঘুরতে থাকে বিভিন্ন সাইটে, নিত্য নূতন তথ্য সংগ্রহের তাগিদে কখন যে ডুবে যায় তথ্যের সমুদ্রে বুঝতেই পারে না। সোনালির সদাজাগ্রত চোখ আবার ফিরিয়ে আনে নির্বাণকে, হেসে মনোনিবেশ করে পরীক্ষার পড়ায়।
মিসেস সান্যাল সোনালিদের পড়ার ফাঁকে নিয়মিত চা-কফি-স্ন্যাক্স পাঠিয়ে দেন। ঘরের সাথে লাগানো সুন্দর বারান্দা আছে, দৈর্ঘ্যে প্রস্থে সমান। পড়ার ফাঁকে পড়ন্ত বিকেলে সেখানে বসে চায়ের স্বাদ উপভোগ করে দু'জনে। পড়া চলে প্রায় রাত ন'টা, দশ'টা অবধি, তারপর নির্বাণ বাড়ি ফেরে। কোন কোন দিন সান্যালসাহেব অফিস থেকে ফিরে আসেন, চারজনে বসার ঘরে বসে ছোট্ট আড্ডা হয়। একদিন ঠিক হল চারজন মিলে সিনেমা যাবেন, বাইরে ডিনার খেয়ে নির্বাণকে বাড়িতে ছেড়ে ফিরে আসবেন।
এই রুটিন চলছিল, ধাক্কা এলো একেবারে অতর্কিতে। একদিন সোনালি কলেজে এসে দেখে নির্বাণ আসেনি। অন্য দিনের মতো ক্লাস করল, লাইব্রেরিতে গেল, কমনরুমে উঁকি মেরে দেখল, বাড়ি ফেরার সময় হল তাও নির্বাণের দেখা নেই। বন্ধুদের জনে জনে জিজ্ঞাসা করল, নির্বাণকে দেখেছে কিনা? না, কেউ দেখেনি। সবারই ধারণা কোন কাজে হয়তো ব্যস্ত তাই আসতে পারেনি, কাল ঠিক আসবে, বন্ধুরা সান্ত্বনা দিল কিন্তু সোনালির মন মানছে না। কলেজের সব ঘর, কমনরুম, অফিস আবার তন্নতন্ন করে খুঁজল কিন্তু নির্বাণের দেখা মিলল না।
যে ছেলে কোনদিন কলেজে আসেনি এমন হয়নি, সে কেন আজ এলো না? সোনালির ফোন নাম্বার ওর কাছে আছে, অবশ্যই খবর দেওয়া উচিত ছিল। কেন দিল না? নির্বাণ তো দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, তবে কি হতে পারে? নির্বাণদের বাড়ির ফোন নাম্বার সোনালির জানা নেই, আদৌ বাড়িতে ফোন আছে কি না তাই জানে না। নিজের উপর বিরক্ত লাগছে, ফোন নাম্বারটা অবশ্যই জেনে রাখা উচিত ছিল। সোনালি বুঝতে পারছে, ও আস্তে আস্তে ভেঙে পড়ছে, শরীর খারাপ লাগছে। বিকেল পাঁচটা অবধি অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে এলো।