Chapter 11 | Part 3

88 7 0
                                    

সুনিপাদেবীর বাবা-মায়ের বিয়ের ছবি অ্যালবামের প্রথম পাতায়, তারপর একে একে কত ঘটনা। দ্রষ্টার ভূমিকা ছেড়ে ধীরে ধীরে সুনিপাদেবী দৃশ্যে প্রবেশ করেছেন--দেখছেন বাবা তখন সাফল্যের চূড়ায়, আর মা সমাজ কল্যাণে ব্যস্ত। দু'জনেই সমাজের প্রথম সারির মানুষ। বাড়িটা সবসময় আনন্দ উৎসবে গমগম করত। এর ভিতর চুপিচুপি তাঁর কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখা, এবং পরিবারে নূতন সংযোজনা অপূর্ব সান্যাল।

পুরানো দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনো গায়ে কাঁটা দেয়, বারবার মনে হয়--কি সব দিন গিয়েছে! বিয়ের রাতে ভয় মিশ্রিত লজ্জার অনুভূতির অনুরণন কোনদিন ভুলতে পারেননি সুনিপাদেবী, ভুলতে চানও না। তারপর হঠাৎ একদিন মায়ের চলে যাওয়া, সুনিপাদেবীর কাছ থেকে দেখা প্রথম মৃত্যু। স্বামীর হাতে হাত রেখে তিনি সামলে নিলেও কিছুতেই মানতে পারলেন না তাঁর বাবা। অত রাশভারী একজন মানুষ একেবারে হতাশ হয়ে পড়লেন। জীবন সেই মুহূর্ত থেকেই ডিরেক্টরসাহেবের কাছে পানসে লাগতে লাগল। অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী কারও অনুরোধে ফল হল না। সুনিপাদেবীর চোখের সামনে দিনে দিনে মানুষটা পালটে যেতে লাগল, কিন্তু একমাত্র মেয়ে হয়ে কোনও সাহায্যে আসতে পারলেন না।

শোক কি ভয়ানক হতে পারে জীবনে প্রথম তার নমুনা পেলেন। মৃত্যু মুহূর্তে ঘটে যায়, কিন্তু স্মৃতি হয়ে রয়ে যায় শোক। যে বাড়িতে সর্বদা খুশীর ফোয়ারা ছুটত, সেই বাড়ি রাতারাতি ভোল পালটে সরকারি গেস্টহাউসের চেহারা নিল। কাজের লোকেরা নিয়ম করে হাজিরা দিত, কিন্তু মন দিত না। দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সুনিপাদেবীর মুখের আদল পালটে গেল, এত বছর পরেও দগদগে ঘায়ের মতো স্মৃতি ব্যথা দেয়। তিন বছর এইভাবে চলেছিল।

আত্মপ্রকাশ করল সোনালি। অনেকদিন পর ভবানীপুরের বাড়িতে আবার সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বলল। সুনিপাদেবীর বাবা জীবনে আলোর সন্ধান পেয়ে শেষবারের মতো জ্বলে উঠেছিলেন সোনালিকে কেন্দ্র করে। সময়ের সাথে সাথে একদিন তিনিও বিদায় নিলেন, পড়ে রইল প্রাসাদোপম বাড়ি আর অ্যালবামের ছবিগুলো।

Khelaghar | খেলাঘরDonde viven las historias. Descúbrelo ahora