দক্ষিণ কলকাতায় আনোয়ার-শা রোডের ওপর বাইশ তলায় নূতন করে সংসার পাতল নির্বাণ আর সোনালি। দারুণ আলো হাওয়া, দক্ষিণ খোলা। বিশেষ আকর্ষণ হল শোবার ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দা, যা আগের ফ্ল্যাটের চেয়ে অনেক বড়ো। সোনালি বরাবর বারান্দা ভীষণ পছন্দ করে, তাই খুব খুশী।
প্রথম দিন একটা ঘরোয়া পার্টী করেছিল। নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ছিল মাত্র চারজন--সোনালির বাবা-মা আর নির্বাণের দাদা-বৌদি। নির্বাণ চাকরি ছেড়ে এখন নিজে ব্যবসা শুরু করেছে, কমোডিটি ট্রেডিং। ব্যবসা শুরু করার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল যে, বাড়িতে আগের চেয়ে অনেক বেশী সময় দিতে পারবে। প্রথমে মনে হয়েছিল ব্যবসায় স্বাধীনতা বেশী, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে তত ভুল ভাঙছে। চাকরিতে কারও ওপর দায়িত্ব দিয়ে অন্তত কিছুসময়ের জন্য নিজেকে মুক্ত করা যায়, কিন্তু ব্যবসায় নিজের জন্য সময় বার করা প্রায় অসম্ভব। থিয়েটার রোডে অফিস নিয়েছে, অফিস বলতে একটাই ঘর। পাঁচ-সাতজনের টিম।
ব্যবসার শুরুতে উৎসাহের স্রোত নির্বাণকে এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল, কিন্তু কিছুদিন অতিক্রান্ত হতেই তাতে ভাটা পড়েছে। মার্কেট কাউকে তোয়াক্কা করে না, সবসময় সবার সম্ভ্রম আদায় করে রাজকীয় স্টাইলেই চলে। বর্তমানে নিচে ডাইভ দেওয়ায়, এবং নানা কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় অনেক ক্লায়েন্টই নির্বাণের সঙ্গ ত্যাগ করেছে। নির্বাণও বুঝতে পারছে 'কল' ঠিক হচ্ছে না, তাতে সে ক্ষুব্ধ এবং নিরুপায়। অফিসে চাকরি করাকালীন যে পরিকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করত, বর্তমানে তার থেকে সে বঞ্চিত। সেই কারণেই পদে পদে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব সফটওয়্যার নির্বাণ এখনও কিনে উঠতে পারেনি, তার জন্য আরও মূলধনের প্রয়োজন।
অফিসে 'কল' নির্বাণ-ই দিত, কিন্তু তার পিছনে আরও অনেকের অবদান থাকত। মার্কেট শুরু হবার আধঘণ্টা আগে প্রত্যেকদিন ভারতবর্ষের সব ব্রাঞ্চের অ্যানালিস্টদের নিয়ে কনফারেন্স হতো, এবং সেখানে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তবে 'কল' দেওয়া হতো। মার্কেট খোলার আধঘণ্টার ভিতর কোন 'কল' যদি পরিকল্পনা মাফিক কাজ না করে, তবে 'প্ল্যান-বি' কি হতে পারে তাও ঠিক করা থাকত। এখন নির্বাণের কাছে 'ব্যাক আপ' বলতে প্রায় কিছুই নেই। উপরন্তু, যখন চাকরি করত তখন মাস শেষ হলে মাইনে পেত, কিন্তু এখন মাসের শেষে প্রত্যেককে মাইনে দিতে হয়। ব্যবসা বাড়ল না কমল তার সাথে সম্বন্ধ থাকে না। দিনে দিনে ব্যবসার জটিল অঙ্কের ফাঁস নির্বাণের গলায় যে ক্রমশ চেপে বসছে তাতে সন্দেহ নেই।