নির্বাণের চেহারায় বিপুল পরিবর্তন লক্ষণীয়। শরীর যেন তার কাছে বাড়তি বোঝা। মনে অসন্তোষের আগুন অবিরাম জ্বলছে, এবং তার তাপে তাকে শুকনো দেখাচ্ছে। শরীর জুড়ে অস্বস্তি বোধ করছে, বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জল খাচ্ছে, অথচ কিছুতেই পিপাসা মিটছে না। কি করণীয় ভেবে না পেয়ে উদভ্রান্তের মতো বসবার ঘরে অতি দ্রুততার সাথে পায়চারী করছে। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাচ্ছে, আবার রবারের বলের মতো দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছে। সব ঘরের দরজা, জানালা নির্বাণ ইচ্ছা করেই খুলে রেখেছে। তার বদ্ধমূল ধারণা সোনালি যে কোন মুহূর্তে, যে কোন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তাকে চমকে দিতে পারে।
কিছুটা দূরত্ব থেকে শোবার ঘরের আয়নায় চোখ পড়তেই নির্বাণ চমকে উঠল। সোনালি নয়, নিজেকে দেখে। নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে আঁতকে উঠল। কি চেহারা হয়েছে? নির্বাণ বিস্মিত যে, আটচল্লিশ ঘণ্টায় এত পরিবর্তন হওয়া সম্ভব মানুষের? মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, গায়ের শার্টটা যেন শপিং মলের শো-রুমে হ্যাঙ্গারে ঝুলছে। শরীরে কোন আঁট নেই। হাসি পেল নির্বাণের।
হঠাতই তার মনে পড়ে গেল ছোটবেলায় মায়ের কাছে শুনেছিল, পঞ্চভূত দিয়ে শরীর তৈরি হয় আবার মৃত্যুর পর পঞ্চভূতেই লীন হয়ে যায়। শুধু শরীর কেন, গোটা পৃথিবীটাই যদি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের গভীর গহ্বরে মিলিয়ে যায়, তাতেও নির্বাণ বাধা দিতে যাবে না। সেই ভয়ানক প্রলয়ের আগে একবার সোনালির সাথে দেখা করতে চায়। তার কাছে নির্বাণের একটাই প্রশ্ন--সে এভাবে চলে গেল কেন? পর মুহূর্তেই মনে হল, উত্তরটা একেবারে অজানা নয়।
নির্বাণ এক গ্লাস জল সম্বল করে সোফায় বসল। শেষ আটচল্লিশ ঘণ্টায় জল ছাড়া কিছু খায়নি। অনেকদিন পর বিরতি, অনেকটা ফাঁকা সময় নির্বাণের হাতে। এতদিন নির্বাণ সময়কে তাড়া করে বেড়িয়েছে, এখন নির্বাণের সাথে সাথে সময়ও থমকে দাঁড়িয়েছে। সবার সাথে যুদ্ধ করে জেতা যায়, কিন্তু হেরে যেতে হয় নিজের কাছে। মনকে কিছুতেই ভুল বোঝানো যায় না। কেউ একটা, কিছু একটা ভিতর থেকে নিরন্তর খোঁচা দেয়, শুরু হয় নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ।