Chapter 12 | Part 3

86 5 0
                                    

সান্যালসাহেব হেসে আবার শুরু করলেন, "এখনো তো কিছুই হয়নি, পুরোটা শুনলে বুঝতে পারবে ওর কি ভীষণ দূরদৃষ্টি ছিল। কয়েকবছর চাকরি করার পর আমরা সবাই যখন নিজেদের প্রতিষ্ঠিত বলে ভাবতে শুরু করেছি, নিজেদের ভিতর আলোচনা করছি--কি করে একটা গাড়ি কেনা যায়? কবে বিয়ে করা যায়? হরিশ তখন দুম করে একদিন কারও সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই চাকরিতে ইস্তফা দিল।"

নির্বাণ বিস্ময়ের সাথে বলল, "কি বলছেন কাকু, এত পরিশ্রমের ফসল যে চাকরি, সেই চাকরি ছেড়ে দিলেন।"

সান্যালসাহেব মুচকি হেসে বললেন, "ও তো সাধারণের ভিতর পড়ে না, ওর চিন্তাভাবনা একেবারে আলাদা। আমরা বোঝাতে লাগলাম যে ওর সিদ্ধান্ত ভুল, কিন্তু তার যুক্তি ছিল, 'কোম্পানি যেভাবে বাড়ছে সেই গতিতে চললে আমার চলবে না, কারণ কোম্পানি হাজার বছর চলবে, কিন্তু আমি আর পঞ্চাশ বছর কাজ করতে পারব, অতএব আমার গতিবেগ কোম্পানির সাথে ম্যাচ করবে না। আমার তাড়া আছে, আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়তে হবে, তাই কোন বাধা চাই না।' অথচ তখন আমাদের কোম্পানি দারুণ কাজ করছে, শেয়ারের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বিদেশ থেকে নিয়মিত অর্ডার আসছে, তাতেও ওর মন টিকল না। আসলে ওকে বাঁধা যাবে না, পালাবেই।"

সান্যালসাহেব একটু থামতেই নির্বাণ প্রশ্ন করল, "তারপর কি করলেন?"

সান্যালসাহেব মেয়েকে লক্ষ্য করে বললেন, "নির্বাণের হরিশকে পছন্দ হয়ে গিয়েছে, কি বল!"

সোনালি বাবার কথায় সায় দিয়ে বলল, "চোখ দুটো দেখ বাবা, জ্বল জ্বল করছে।"

নির্বাণ মাথা নিচু করতেই সান্যালসাহেব বললেন, "হরিশ কলকাতায় চাকরি করতে করতেই শহরের কয়েকজন লেদার মার্চেন্টের সাথে কথা বলে রেখেছিল। অসম্ভব ভাল বক্তা ছিল, প্রত্যেক কথার পিছনে অকাট্য যুক্তি ছিল। এক কথায় সব ছেড়ে তাদের জন্য অর্ডার আনতে ইউরোপ পাড়ি দিল। নিজের শেষ সঞ্চয় কাজে লাগাতে এক ঘণ্টাও ভাবতে হয়নি ওকে। ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি থেকে প্রচুর অর্ডার নিয়ে ফিরে এল। বছরখানেকের ভিতর নিজে কোম্পানি খুলে রপ্তানি শুরু করে দিল। বাকী তো ইতিহাস, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।"

Khelaghar | খেলাঘরDonde viven las historias. Descúbrelo ahora