ঘণ্টাদুয়েক চলল কর্মকাণ্ড। রান্নাঘরের দরজা খুলতেই জিভে জল আসা গন্ধে সবার মন মাতোয়ারা। প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ, কিন্তু তাতে মন নেই রাঁধুনিদের। অনিতা অতি যত্নের সাথে এক একটা পদ খাবার টেবিলে রাখছে, আর রঙের বৈচিত্র্যে সাদামাটা টেবিলের চেহারাই পালটে যাচ্ছে। সোনালি এবার মনঃসংযোগ করল সালাদের আয়োজন করতে। মলিনাদেবী একেবারে পাশে বসে লক্ষ্য করছেন, কি করছে মেয়েটা! ব্যাগ থেকে চার-পাঁচটা ছোট ছোট প্যাকেট বার করল, তার কোনটায় এক-ইঞ্চি চৌকো করে কাটা আপেল, কোনটায় একেবারে পাতলা করে কাটা পেঁয়াজ, আবার কোনটায় শসা। এছাড়া আছে নানান রকম সালাদ পাতা, এবং এক বাটি দই। মলিনাদেবী সোনালির ব্যবস্থাপনার বহর দেখে অবাক হয়ে বললেন, "দেখ দেখি একটা একটা করে জিনিষ কি যত্ন করে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। কেন এত কষ্ট করতে গেলে মা?"
সোনালি মন দিয়ে কাজ করতে করতে জবাব দিলো, "এটা কোন কষ্টের কাজই না। দেখুন, এখনি হয়ে যাবে।"
একটা কাঁচের পাত্রে দই আর তাতে সামান্য নুন দিয়ে ফাটাতে থাকল। মাঝে মাঝে চামচে কিছুটা দই তুলে উপর থেকে পাত্রে ফেলে পরীক্ষা করছে, ঠিক মত ফেটানো হয়েছে কিনা? মলিনাদেবী না বলে পারলেন না, "একেবারে পাকা রাঁধুনি।"
উত্তমদা বললেন, "রাঁধুনি বলবেন না, বলুন শেফ।"
সবাই একসাথে হেসে উঠল। সোনালি একাগ্রচিত্তে আপেল, শসা, পেঁয়াজ সব একে একে দই-এ মিশিয়ে দিলো। পাশে ফোন রাখা, শেষমেশ সালাদের চেহারা ঠিক কি রকম দেখতে হওয়া উচিত ফোনের পর্দায় তার ছবি একবার দেখে নিলো। এবার সোনালির ব্যাগ থেকে বেরল ছোট কাঁচি যা দিয়ে বিভিন্ন সালাদ পাতা বিভিন্ন আকারে কাটতে লাগল। সোনালিকে ঘিরে বেশ ভিড় জমে গেছে, সবাই উৎসাহী দেখবার জন্য। নির্মাল্য কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে বলল, "তুমি কি সালাদের ছবি আর রেসিপি ফোনে ডাউনলোড করে নিয়ে এসেছ?"
"ঠিক, ভয় ছিল যদি মাঝপথে ভুলে যাই।"
"বাপরে বাপ! কি অধ্যবসায় মেয়েটার।" সবাইকে উদ্দেশ্যে করে নির্মাল্যর ঘোষণা, "আমি এর নাম দিলাম, 'হাই-টেক সালাদ'।"