নির্বাণদের শোবার ঘরে খাটের পাশে একটা লম্বা টেবিল করা হয়েছে যাতে অন্তত তিন-চারটে ল্যাপটপ পাশাপাশি রাখা যায়। একটাতে ট্রেডিং টার্মিনাল, একটায় অফিস এবং বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের সাথে অনলাইন চ্যাটিং, অন্য দুটোয় সারা পৃথিবীর মার্কেট সংক্রান্ত খবর ফ্ল্যাশ করতে থাকে। মাঝে মাঝে সোনালি অনেক রাত অবধি জেগে থেকে নির্বাণের কাজে উৎসাহ দেয়, আবার কখনো ক্লান্ত থাকলে নির্বাণকে এক হাতে ছুঁয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। নির্বাণ অতি সন্তর্পণে কাজ চালিয়ে যায়। সোনালির উষ্ণ স্পর্শে সান্ত্বনা পায়। দু'জনেই অধীর অপেক্ষায় থাকে রবিবারের জন্য।
সন্ধ্যার পর নির্বাণ বাড়ি থেকে কাজ করায় কিছু কিছু ক্লায়েন্ট বাড়িতে আসেন। সোনালির রুটিনের বাইরে একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে, শুক্রবার রাতে খুব ছোটো করে পার্টী, তবে সময়সীমা নির্দিষ্ট করা আছে। মাঝে মাঝে সোনালিও যোগ দেয় তবে মন থেকে নয়। নির্বাণও বোঝে এবং কখনো সোনালিকে বসবার জন্য জোর করে না।
এক শুক্রবার মোটাসোটা মাঝবয়সী অবাঙালী ভদ্রলোক, নির্বাণের ক্লায়েন্ট, তার দুই বন্ধুকে নিয়ে হাজির তার ফ্ল্যাটে। নির্বাণের ক্লায়েন্টদের ভিতর আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর উপস্থিতি সাড়া জাগানো। ভদ্রলোক শেঠীসাহেব নামেই পরিচিত। অঢেল টাকার মালিক, বাজারে লগ্নিও প্রচুর তাই মার্কেটে নামডাক আছে। তিনি যাতে পয়সা লাগান অন্যেরাও তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে কেন্দ্র করে একটা গোষ্ঠী তৈরি হয়ে গিয়েছে। চাটুকারদের সাথে বেশী সময় কাটালে যা হয়, নিজের মূল্যায়ন আর তখন নিজে করা যায় না, তাঁরও সেই অবস্থা। তাঁর অবশ্য কিছুতেই কিছু এসে যায় না, কারণ জাগতিক নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেন না।
যাইহোক, মার্কেট স্বমহিমায় নিজস্ব গতিতে চলছে। নির্বাণ বসবার ঘরে ল্যাপটপ নিয়ে এসে কাজ করছে, ক্লায়েন্টরা এলে সবসময় তাই করে। সবাই হাঁ করে ল্যাপটপের স্ত্রীনে চোখ রেখে স্থির হয়ে বসে আছে, যেন সাপ খেলা দেখছে। সাপ নিজের শরীরের ভিতর বিষের থলি বহন করে, কিন্তু তাতে তার কোন ক্ষতি হয় না। মার্কেটও তাই, লাভ-লোকসানের ঝুলি ঝুলিয়ে ঘড়ির কাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে টিকটিক করে চলে। প্রতি নিয়ত ছুঁয়ে যায় অগণন লগ্নিকারিদের হৃদয়, কেউ লাভের অংশ পকেটে ভরতে পেরে খুশী হয় আবার কেউ অল্পের জন্য টার্গেট মিস করে আফসোস করে, কিন্তু তাতে মার্কেটের কিছু যায় আসে না।।