সোনালির দৃষ্টি লেকের জলে স্থির, কিন্তু মন অস্থির। কত শত চিন্তা বুদবুদের আকারে মনের পর্দায় উঁকি দিয়ে, ছোটো ছোটো ছাপ ফেলে, মনের গভীরে কোথায় যে মিলিয়ে গেল – সোনালির বিভ্রান্ত মন তার হদিশ পেল না। হঠাৎই তার মনে হল - মিছেই লোকে বলে মানুষকে মারতে গুলি, বন্দুকের প্রয়োজন। সোনালির দৃঢ় বিশ্বাস মানুষ খুন করতে কোন অস্ত্রের দরকার নেই - শুধু কথার কারসাজিতেই প্রতিপক্ষকে বধ করা সম্ভব। কাঁচে ঢিল ছুঁড়লে যেভাবে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, সেইভাবে দু-চার কথায় অনায়াসে চুরচুর করে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় অন্যের মন, নিমেষে শেষ করে দেওয়া যায় সযত্ন লালিত আশা, ভরসা, বিশ্বাস। বাকী রইল শরীর - প্রকৃতি সঠিক সময়ে নিজেই তাকে টেনে নেবে, এ তথ্য তো সবার জানা।
সোনালির মন বাস্তবে ফিরে আসতেই, নির্বাণের শরীরী ভাষায় অসহায়তার ছবি লক্ষ্য করে খারাপ লাগল। বুঝতে অসুবিধা হল না যে, সে কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু তার হাতেই বা কতটুকু ক্ষমতা আছে যা দিয়ে অন্যের মন জয় করতে পারে! জগৎসংসারে একজনকে খুশী করবার চাবি অন্যের হাতে সবসময় থাকে না। নিজেকে তন্নতন্ন করে খুঁজলে তবেই তার সন্ধান মেলে। আসলে চাবির প্রয়োজন হয় না, কারণ কোথাও কোন তালা লাগানো নেই। যেটুকু বাধা বিপত্তি চলার পথে পথ আটকে দাঁড়ায়, তা অধ্যবসায়ের দ্বারা অতিক্রম করা সম্ভব যদি খোলা মনে পরিক্রমা করা যায়।
সোনালি ভালোবেসে একটু সাহায্য করতেই নির্বাণ উঠে বসল। রুমাল দিয়ে মুখ মুছে জলের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েদের চোখের জল কেমন যেন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে, তাই বোধহয় সস্তাও হয়ে গিয়েছে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের চোখে জল দেখলে বিস্মিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দু'জনেই সামনে তাকিয়ে, তবে কার মনে কি ছবি চলছে তা কেবল তারাই জানে। নির্বাণ হঠাৎ-ই প্রশ্ন করল, "সোনালি স্বপ্ন দেখা কি খারাপ?"
সোনালি বরাবরই স্বপ্ন দেখার পক্ষে সওয়াল করেছে, তাই নির্বাণের প্রশ্ন কিছুটা অবাক করে দিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে স্বপ্ন শব্দটা সোনালির কাছে বহু ব্যবহৃত একটা শব্দ ছাড়া আর কোন অর্থ বহন করছে না। সোনালি ভদ্রতা করে হেসে জবাব দিল, "খারাপ কেন হবে? স্বপ্ন ছাড়া কি মানুষ বাঁচতে পারে?"