Chapter 13 | Part 5

92 3 0
                                    

কথা থামিয়ে গান গাইতে শুরু করলেন সুনিপাদেবী। প্রথমেই ধরলেন, "কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা ..."

সোনালি হাঁ করে মায়ের গান শুনছিল। কোন ভূমিকা ছাড়াই গান শুরু করায় বেশ অবাক হয়েছে। মায়ের একাগ্রতা তাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে। সুনিপাদেবী মুহূর্তের মধ্যে সুরের সাগরে ডুবে গেলেন। একের পর এক রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে চলেছেন। সোনালি অনুভব করছিল তার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, গানের গভীরতায় নিজে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে। সবার অলক্ষ্যে কেউ যেন তাকে হাত ধরে অভিসারে নিয়ে চলেছে।

মিসেস সান্যালের দু-চোখ বেয়ে নেমে আসছিল জলের ধারা, কিন্তু কণ্ঠস্বর একেবারে পরিষ্কার। উদাত্ত কণ্ঠে যেন বেদমন্ত্র উচ্চারণ করছেন। সোনালি সম্মোহিত সেই জাদুকাঠির স্পর্শে যার শক্তিতে আবহমান কাল ধরে ঘুরে চলেছে বিশ্বসংসারের চাকা। সোনালির মনে হল, 'এতদিনের পড়াশুনা, চাকরি, সাফল্য বা ব্যর্থতা সব মুছে দিয়ে, মা হৃদয়ে মঙ্গল আরতির প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে, যে প্রদীপের জ্বালানি--ভক্তি, সততা, উদারতা।'

হৃদয়ে হৃদয়ে অনুরণন--মা মেয়ে দু'জনকেই ক্ষণিকের জন্য হলেও তুরীয় অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছিল। সেই অবস্থায় তো বেশীক্ষণ থাকা সম্ভব নয়, নেমে আসতেই হয়। গান একসময় শেষ হল, কিন্তু যে যার জায়গায় চুপ করে স্থির হয়ে বসেছিলেন অনেকসময়।

সম্বিত ফিরে পেতেই মিসেস সান্যাল শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোণ মুছলেন। মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসলেন, দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ল ঘর জুড়ে। সোনালি উপলব্ধি করল--'মা' অন্য থাকের মানুষ। এতদিন একসাথে থেকেও যার নাগাল পায়নি।

ঘড়িতে চোখ পড়তেই মিসেস সান্যাল অবাক হয়ে বললেন, "এ কি রে! কখন বারোটা বেজে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। আমি খাবার গরম করছি, তুই চেঞ্জ করে নে।"

সোনালি মা-কে আশ্বস্ত করে বলল, "কাল তো রোববার। তুমি আগে ফ্রেস হয়ে নাও, তারপর খাওয়া যাবে।"

খাবার টেবিলে আবার এক রাউন্ড আড্ডা। মা মেয়ের আজ অন্য মুড, কিছুতেই কথা শেষ হচ্ছে না...কে যেন অনন্ত থেকে কেবলই রাশ ঠেলে দিচ্ছে। খাবার পর যে যার ঘরে শুতে গেলেন। নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করতেই, সোনালির কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে বলে মনে হল। মনে হল, মা-কে ছাড়া আজ রাতে সে কিছুতেই একা থাকতে পারবে না। প্রথমে কিছুক্ষণ নিজেকে যুক্তি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করল, কিন্তু তাতে লাভ হল না। অতঃপর মায়ের ঘরের দরজায় টোকা মারতেই, সুনিপাদেবী দরজা খুলে আদর করে মেয়েকে ঘরে ডেকে নিলেন। সোনালি কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া জিজ্ঞেস করল, "মা, আজ আমি তোমার কাছে শুতে পারি?"

Khelaghar | খেলাঘরDonde viven las historias. Descúbrelo ahora