সোনালি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরের লাগোয়া বারান্দায় মায়ের সাথে চায়ের আড্ডায়। চা তৈরির দায়িত্ব সোনালির, কিন্তু টি-পটে চা নাড়তে নাড়তে সোনালির মন দ্বিধাগ্রস্ত। মিসেস স্যানাল চেয়ারে হেলান দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে দূরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মা-কে একঝলক দেখে খুব রোম্যান্টিক লাগল সোনালির। ভেবেছিল চায়ে চুমুক দিয়ে আজকের দিনপঞ্জিকা মা-কে শোনাবে, কিন্তু মায়ের মুড দেখে আর ঐ প্রসঙ্গ তুলতে ইচ্ছা করলো না। মিসেস স্যানালেরও মেয়েকে দেখে কোন কারণে চিন্তিত মনে হওয়ায় বিরক্ত করতে মন সায় দিলো না।
জীবন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। কেউ জীবনকে সমুদ্রের স্রোতের সাথে তুলনা করে, আবার কেউ আকাশের অন্তহীন বিস্তৃতির কথা ভেবে তাতে ডুব দেয়। সময়ের ঢেউ প্রতিনিয়ত আছড়ে পড়ছে প্রত্যেকের জীবনে, আবার নীরবে মিলিয়েও যাচ্ছে। কোন ঢেউ শরীর ভেজাবে আর কোনটা মন ভেজাবে বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল, তাই মেয়েকে সময় দিলেন।
সোনালির চা তৈরি, মা-কে কাপ বাড়িয়ে দিতেই মিসেস স্যানাল বললেন, "তুই কি গান গাওয়া একেবারে ছেড়ে দিলি? বড়ো সুন্দর গানের গলা ছিল তোর, যে শুনত সেই প্রশংসা করতো। দেখ না আর একবার চেষ্টা করে।" চায়ে চুমুক দিয়ে একটু উদাস হয়ে বললেন, "গান জীবনে একটা বড়ো বন্ধু।"
সোনালি নিজের চায়ের কাপে হালকা চুমুক দিয়ে বলল, "তোমার গলা তো আমার চেয়ে অনেক ভাল ছিল, তুমি ছাড়লে কেন মা?"
"বিয়ের পর আর হয় না। মেয়েদের এই এক মুশকিল।"
সোনালি জিজ্ঞাসা করল, "কেন, সময় পেলে না?"
মিসেস স্যানাল একটু হেসে বললেন, "কি জানি, কারণ আর পরিষ্কার করে মনে পড়ে না। তুই কথাটা তুললি বলে, আমি তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে একসময় ওস্তাদজীর কাছে গান শিখতাম।"
সোনালির বুঝতে অসুবিধা হল না, মায়ের কথাগুলোর পেছনে একটা প্রচ্ছন্ন আক্ষেপের বেদনা লুকিয়ে আছে। মায়ের হাসিখুশি মুখই বরাবর দেখে এসেছে, সেখানে যে কোন ক্ষত থাকতে পারে, যন্ত্রণার লেশমাত্র বিরাজ করতে পারে তা কখনো সোনালির মাথাতেই আসেনি। সবসময় বাড়িটাকে জমিয়ে রাখে যে মহিলা তার অন্দরের একরত্তি ছবি দেখেই শঙ্কিত সোনালি।