Chapter 11 | Part 1

72 3 0
                                    

নির্বাণের ট্রেনিং ঝড়ের গতিতে চলছে। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা। তাতেও বিরাম নেই, হোটেলের ঘরে ঢুকেই বই নিয়ে বসতে হয়, কারণ পরদিন সকালেই পরীক্ষা। হোটেল খুব সুন্দর এবং কেতাদুরস্ত। সমুদ্রের নীল জল আর বিশাল আকাশ যেখানে মিশেছে, নির্বাণের খুব ইচ্ছা করে সেখানে দৌড়ে যেতে, কিন্তু হাতে-পায়ে কে যেন বেড়ী পরিয়ে রেখেছে, সেই বন্ধন ছিন্ন করে কিছুতেই বেরুতে পারে না। একসময় ক্লান্তিতে চোখ জড়িয়ে আসে। মোটা মোটা বইয়ের পাতায় পাতায় অসংখ্য ছাপা অক্ষরের ভিড়ে মন হারিয়ে যায়। বিদ্যা শিক্ষার এহেন প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করে বিদ্যাদেবী নীরবে আশীর্বাদ করে দৃশ্য থেকে অন্তর্হিত হন। নির্বাণ নিশ্চিন্তে নিদ্রার গভীর সমুদ্রে অবগাহন করতে থাকে।

সোনালির সাথে রোজ রাতে একবার কথা হয় ঠিকই, কিন্তু তাতে মন ভরে না বরং খিদে আরও বেড়ে যায়। মনে মনে নির্বাণ বদ্ধপরিকর যে, সোনালিকে নিয়ে এই হোটেলের এই ঘরে একটা রাত কাটিয়ে সুদ সমেত শোধ নেবে ম্যানেজমেন্টের অবাঞ্ছিত শাস্তির, তা নাহলে ক্ষোভ মিটবে না।

সোনালির অফিস পার্কস্ট্রীটে, সকাল ন'টা থেকে সন্ধ্যা ছ'টা, নিজেই গাড়ি চালিয়ে যায়। সোনালির মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা যেহেতু সাধারণের থেকে বেশী, তাই দায়িত্ব বুঝে নিতে সময় লাগেনি। কয়েকদিন অফিস করেই সোনালি উপলব্ধি করেছে--কিভাবে কাজের পরিধি দিনে দিনে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কে কত চাপ নিতে পারে তার পরিমাপ প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে। তবে কিছুই একপেশে নয়, দায়িত্বের সাথে অন্য পাল্লায় বাড়তে থাকে মাইনের লোভ, পদমর্যাদার হাতছানি। সোনালি চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিয়েছে, তাই ভালই লাগছে। অফিসের পরিবেশ খুব ভাল, সহকর্মীদের সাথে আলাপও জমে গিয়েছে।

সোনালি কোনদিনই টাকার পিছনে দৌড়ে জীবনের অতি দামী সম্পদ, অর্থাৎ সময়কে হেলায় হারাতে পছন্দ করে না। সে নিজের জন্য সময় চায়। প্রত্যেকটা দিন হুসহুস করে কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে, আর তার নাগাল পাওয়া যাবে না, সোনালি সেই দর্শনে বিশ্বাস করে না। যা বিশ্বাস করে না, তাকে প্রশ্রয় দেয় না; ভবিষ্যতেও দেবে না বলে মনে মনে স্থির করে নিয়েছে।

Khelaghar | খেলাঘরWhere stories live. Discover now