শীত ঘুরে বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্ত। মন কেমন করা বসন্ত। অকারণে মজা মানে বসন্ত। দক্ষিণের হাওয়া মানে বসন্ত। হাজার কর্ম ব্যস্ততার ভিতরও মনের সদর দরজায় বসন্তের কড়া নাড়া সবাই শুনতে পায়। বাতাসে কি এক জাদু আছে যা শরীর মন জুড়িয়ে দেয়! আরামের নরম অনুভূতিতে শরীর শিহরিত হয়--মনে হয় আজ ছুটি। রৌদ্রে তাপ নেই, কিন্তু মিঠে আমেজ আছে। শীতের প্রকোপ নেই, অথচ ভোররাতে গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিলে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছা করে না। মন আর বাড়িতে বন্দী থাকতে চায় না, চারিদিকে মুক্তির আহ্বান, তাতে সাড়া দিতে বাধ্য সবাই।
নির্বাণ গাড়ি চালানো শিখে নিয়েছে। বেশীরভাগ সময় নির্বাণই চালকের গদিতে, পাশে সোনালি। মনে মনে নির্বাণ সোনালিকে এইভাবে চিরকাল পাশে পেতে চায়, এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না। ভালোবাসার মায়াডোরে জীবনভর বেঁধে রাখতে চায়। একটা রবিবার দুপুরে নির্বাণ আর সোনালি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে একেবারে উদ্দেশ্যহীনভাবে, মন যেদিকে নিয়ে যায়। ময়দানে রেসকোর্সের পাশ দিয়ে গাড়ি যেতেই সোনালি নির্বাণকে দাঁড় করাল। রাস্তার মাঝে তো আর রাখা যায় না, তাই দুটো গাছের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে নির্বাণ রাখল, যাতে সোনালির গায়ে রোদ না লাগে। চোখের সামনে সবুজের বাহার দেখে দু'জনেই মুগ্ধ। কলকাতায় যে এত সবুজ আছে কখনো সেভাবে খেয়ালই করেনি! কে বলে কলকাতা ইট-পাথরের তৈরি? একেবারে ভুল কথা। আসল কথা হল--সবুজ দেখতে হলে সবুজ মন চাই।
বেশ কিছু সময় সেখানে কাটিয়ে দুই বন্ধু চলল বাইপাসের ধারে বিরিয়ানি খেতে। তারপর সল্টলেক সিটি সেন্টার। দু'জনেরই পছন্দের জায়গা, খোলামেলা পরিবেশে খুব স্বচ্ছন্দ লাগে। কলকাতায় এই ধরনের স্পেসের বড়ো অভাব। সোনালিকে একটা ভাল জায়গায় বসিয়ে, যেখান থেকে সূর্যাস্ত সুন্দরভাবে দেখা যায়, নির্বাণ চলল ফুডকোর্ট থেকে দুটো কালো কফি নিয়ে আসতে। সূর্য অস্তগামী, হালকা হাওয়া শরীর-মনে দোলা দিয়ে গেল। টুকরো টুকরো ছবি ভেসে উঠে আবার মনের গভীরে তলিয়ে যেতে সময় লাগল না। কফিতে চুমুক দিয়ে নির্বাণের প্রশ্ন, "সোনালি, তোমার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি? একটু শোনাও।"