মুহূর্তের মধ্যে নির্বাণ ফিরে গেল নিজের স্বপ্নের জগতে। তার সামনে বড়ো সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জও বটে। কমোডিটি মার্কেটে যদি নিজেকে কোম্পানির কাছে অপরিহার্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কমোডিটি মার্কেটে টার্নওভার বাড়াতে সুবিধা হবে, স্বাভাবিকভাবেই তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাড়তে থাকবে বোনাস এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা। পরিচয় হবে শহরের নামজাদা, পয়সাওয়ালা ক্লায়েন্টদের সাথে। নামী কোম্পানিতে বড়ো পদে কাজ করার প্রধান সুবিধা হল--নিজের পরিচিত মহলের বৃত্ত অনেক বড়ো হয়ে যায়। বাড়িতে সময় দেওয়ার মতো সময় থাকবে না ঠিকই, কিন্তু দিন কাটবে টানটান উত্তেজনায়। নির্বাণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যদি কাজ হয়, তবে বোনাস সহযোগে তিন লাখ টাকা মাসে পাওয়া উচিত। চোখের সামনে ছয় অঙ্কের সংখ্যাটা হাতছানি দেওয়ায় অদ্ভুত রোমাঞ্চ অনুভব করছে শরীর মন জুড়ে।
কিছুদিনের ভিতর তারা নিজেদের নূতন ফ্ল্যাটে চলে যাবে। নূতন করে সংসার সাজাতে হবে, শুরু হয়ে যাবে বাড়ির ঋণ পরিশোধের কিস্তি। সবেতেই টাকার প্রয়োজন, মাইনে বেড়ে গেলে অনায়াসে সব সামলে নিতে পারবে। নির্বাণের ইচ্ছা টানা দশ বছর এই গতিতে কাজ চালিয়ে যাবে, তারপর চাকরি থেকে চিরতরে অবসর নিয়ে বাকী জীবন সোনালির সাথে গল্প করে কাটিয়ে দেবে। মনে পড়ে গেল হানিমুনের দিনগুলো। মন ঘুরে বেড়াতে থাকল ভেনিস শহরের অলিগলিতে--কখনো ওয়াটার বাসে, কখনো গন্ডোলায়। নির্বাণের সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ভেনিস। পৃথিবীর ভিতর এমন জায়গা আছে বলে বিশ্বাস করা মুশকিল। কি সুন্দর মানুষের ব্যবহার, সরল মুখশ্রী, ভাবটাই আলাদা।
সোনালি ঘরে ঢুকতেই নির্বাণ বাস্তবে ফিরে এল। মন খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে--সোনালিই তাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে, তবে সুর কেটে যাচ্ছে কেন? সদ্যস্নাতা সোনালিকে ভীষণ পবিত্র লাগছিল, আবার অদ্ভুত একধরনের দূরত্ব বোধ করছিল নির্বাণ। ভেজা চুলে অন্য এক জাদু আছে...তার খুব ইচ্ছা করছিল একবার ছুঁয়ে দেখতে, কিন্তু মন সায় দিল না। খুব নরম স্বরে নির্বাণ জিজ্ঞেস করল, "সোনালি, তুমি কি রাগ করলে?"