এক নিমেষের মধ্যে সোনালির মস্তিষ্কে ঝিলিক দিয়ে গেল হসপিটালের সুপার, বাবার বন্ধু, ডক্টর শৈবাল রায়ের নাম। ফোনে নাম্বারটা সেভ করে রেখেছিল, চট করে পেয়েও গেল, সাথে সাথে ফোন করল, কিন্তু নাম্বারটা ব্যস্ত আছে। ডক্টর রায়ের সাথে যোগাযোগ হয়নি ঠিকই, কিন্তু আশার আলোর আভাস এসে পৌঁছেছে সোনালির হৃদয়ে। প্রচণ্ড বৃষ্টির রাতে গাড়ির হেডলাইটের অস্পষ্ট আলোয় যতটুকু রাস্তা আলোকিত হয় ততটুকু কিরণেই সোনালি স্বস্তি বোধ করছে, দমবন্ধ করা ভাব কাটছে তা ভিতরে ভিতরে অনুভব করছে। এক বছর আগে নির্বাণের অসুখের সংবাদে সোনালি যেভাবে ভেঙে পড়েছিল তা হুবহু মনে আছে, তাই এবার আর তার পুনরাবৃত্তি করতে চায় না। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এখন কাউকে বিরক্ত করবে না। প্রথমে নিজে চেষ্টা করবে সমস্যার সমাধান করতে, আর সব থেকে বড়ো কথা নির্বাণ তো ভালই আছে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে সোনালি।
ফোন বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে দেখে স্ক্রিনে শৈবাল রায়ের নাম ফুটে উঠেছে। কথা শুরু করল, "কাকু, আমি অপূর্ব স্যানালের মেয়ে। বাবার সাথে..."
আর বলতে হল না, ডক্টর রায় বললেন, "তুমি সোনালি তো?"
সোনালি বিস্মিত হয়ে বলল, "আপনার মনে আছে আমার নাম।"
"মনে থাকবে না? বল কি খবর?"
"আমি একবার আপনার সাথে দেখা করতে চাই, সম্ভব?"
ডক্টর রায় অভয় দিয়ে বললেন, "নিশ্চয়ই সম্ভব, কিন্তু ব্যাপারটা কি? তোমার বন্ধু কেমন আছে?"
"ভাল আছে, ওর বিষয়েই একটু বিশদভাবে জানতে চাই। আমার খুব চিন্তা হয়..." কথা শেষ করতে পারল না সোনালি, কণ্ঠস্বর রুদ্ধ।
ডক্টর রায় সাথে সাথে শুরু করলেন, "একদম নার্ভাস হবে না। তোমার বন্ধুর রেফারেন্স আমাকে দাও।"
সব কাগজ হাতের কাছে নিয়েই সোনালি ফোন করেছিল। নাম, আগের বেড নাম্বার, ওয়ার্ড নাম্বার জানাতেই পরদিন সকাল এগারোটায় সোনালিকে দেখা করতে বললেন। ফোন কেটে দিয়েই সোনালির মনে হল, আগামীকাল সকাল এগারোটা বাজতে আর কুড়ি ঘণ্টা বাকী। বিছানায় শুতেই নির্বাণের ফোন। চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কেমন আছো সোনালি?"