অনেকদিন পর আবার নির্বাণ কলেজে। স্বভাবতই নির্বাণকে ঘিরে উৎসবের পরিবেশ। একে একে বন্ধুরা হাত মিলিয়ে যাচ্ছে, কেউ আলিঙ্গন করছে। নির্বাণ বরাবরই বন্ধুমহলে জনপ্রিয়, কিন্তু এখন কলেজের হিরো। এই বয়সেই হসপিটালে এক মাস কাটিয়ে আসায় নির্বাণের বাজারদর এখন তুঙ্গে, সবাই জানতে চায় নির্বাণের অভিজ্ঞতার কাহিনী। কমনরুমে পা দিতেই পুষ্পবৃষ্টি শুরু হল, মাথার উপর সিলিং ফ্যান থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়েই যাচ্ছে। সোনালি কলেজের শুরুতেই ছেলেদের দুই দলকে এক করে দিয়েছে, তাই দোলের পরদিন থেকে আলাদা দলের অস্তিত্ব নেই। একটাই দল। সত্যি কথা বলতে কি - নির্বাণের অসুস্থতার খবর পেয়ে সোনালির পর সব থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে হিমাদ্রি, একসময়ের বিরোধী পক্ষ। কলেজ ইউনিয়নের অনেক নেতাই বিভিন্ন অজুহাতে দলটাকে ভাঙবার খেলা খেলেছে, কিন্তু এখনো অবধি অসফল।
সবার শেষে দেখা গেল সোনালিকে, এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে, আজকের ইভেন্ট ম্যানেজার। নূতন ব্যাচের ছেলেমেয়েরাও উৎসবে অংশ নিয়েছে। কমনরুম আজ আয়তনে ছোট মনে হচ্ছে। সোনালির চোখে মুখে প্রশান্তি, ঠিক যেভাবে ভেবেছিল এখনো অবধি অনুষ্ঠান সেভাবেই এগিয়ে চলেছে। একটু ফাঁক পেতেই নির্বাণের মনে হল, আগে অধ্যাপকদের প্রণাম করে আসা উচিত। সবাই সায় দেওয়ায় পুরো দল নিয়ে নির্বাণ একে একে সবাইকে প্রণাম সারল। বাদ গেল না দারোয়ান, জমাদার, এবং মালী। নির্বাণকে কাছে পেয়ে সবাই খুশী। এবার কমনরুমে খাবার পালা। আজকের মেনু একেবারে আলাদা, নির্বাণের সবচেয়ে পছন্দের কড়াইশুঁটির কচুরি আর কাশ্মীরী আলুর দম, তারপর মিষ্টি আর আইসক্রিম। নির্বাণ আড়চোখে মাঝে মাঝে সোনালির দিকে তাকাচ্ছে, জানে সবই সোনালির কীর্তিকলাপ। বিকেল অবধি চলল গান, কবিতা পাঠ, আর তার সাথে তাল রেখে টেবিল বাজানো।
আড্ডা শেষ হতেই সোনালি নির্বাণকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাড়ির পথে। আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু, সামনে পরীক্ষা আর তার ঠিক আগেই অনেকগুলো ক্লাস করা হয়নি, স্বভাবতই অনিচ্ছাকৃত হলেও বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে নির্বাণ। সোনালি ক্লাসে উপস্থিত ছিল ঠিকই, কিন্তু পড়ায় সেভাবে মন দিতে পারেনি। পরীক্ষার দু-মাস বাকী, দু'জনেই সিদ্ধান্ত নিলো বাকী সময়টা সবকিছু সরিয়ে রেখে শুধু পড়াশুনায় মনোনিবেশ করবে। পরীক্ষায় রেজাল্ট ভাল করতেই হবে। সোনালির চোখের দিকে তাকালেই নির্বাণ ভরসা পায়, মনে মনে ভাবে সোনালি এত শক্তি পায় কোথা থেকে? উৎস কি? কোন কিছুতেই সোনালি বিচলিত হয় না। নির্বাণের সাথে পরিচয় হওয়া থেকে তার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছে। নির্বাণকে নির্ভার করে দিয়েছে, সেও নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছে।