Chapter 16 | Part 4

68 2 0
                                    

বৈঠকখানায় নির্বাণ একা। একরাশ শূন্যতার মাঝে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাত বারোটায় মার্কেট বন্ধ হতেই বাকীরা বিদায় নিয়েছে। কিছু ক্লায়েন্ট শেঠীসাহেবের সাথে আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে। আজকের দুনিয়ায় দল ছাড়া নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখা বেশ মুশকিল, তাই মানুষ যে দল ভারী স্বাভাবিকভাবেই সেদিকে ঝুঁকে যায়। এ তথ্য নির্বাণের অজানা নয়, এবং তা নিয়ে তার মনে কোন ক্ষোভও নেই।

নির্বাণের মন খারাপের প্রধান কারণ—সে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সোনালিকে অপমানিত হতে হয়েছে। সোনালির নরম মনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, কিভাবে তার উপশম করবে কিছুই মাথায় আসছিল না। নিজেকে চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে এক চুমুকে শেষ করল। মনে মনে হয়তো শেঠীকেই গিলে ফেলল। নির্বাণ খুব ভালো করে জানে শেয়ার বাজার ক্রিকেটের ময়দান নয়, যেখানে বন্ধু রাজা প্রতিপক্ষ সেজে বল হাতে দৌড়ে আসবে, বা সোনালি তাকে উৎসাহ দিতে মাঝমাঠে কোমর দোলাবে। তবে নির্বাণ চ্যালেঞ্জকে ভয় পায় না, বরং মার্কেট তাকে শিক্ষা দিয়েছে--কি করে শেষ মুহূর্ত অবধি ক্রিজে থাকতে হয়।

মার্কেট সংক্রান্ত গবেষকদের মতে--মার্কেটে চল্লিশ পারসেন্ট ফান্ডামেন্টাল, আর ষাট পারসেন্ট টেকনিকাল কাজ করে। নির্বাণ মার্কেটের অভিজ্ঞতা থেকে এবং বহু রিসার্চ করে মিশেলের ভাগ পালটে নিয়েছে। তার সিদ্ধান্ত--কুড়ি পারসেন্ট ফাল্ডামেন্টাল, তিরিশ পারসেন্ট টেকনিকাল, পঁচিশ পারসেন্ট সেন্টিমেন্ট, আর বাকী পঁচিশ পারসেন্ট ক্লায়েন্টের সাইকোলজি।

বৃথা সময় নষ্ট না করে অপরাধীর মতো মুখ করে ঘরে ঢুকল নির্বাণ। বিষণ্ণ কণ্ঠস্বরে বলল, "সোনালি, আমি সত্যিই ক্ষমার অযোগ্য। আমার জন্যই তোমাকে ঐ অসভ্য লোকটার অভদ্রতা সহ্য করতে হল।"

সোনালি সান্ত্বনা দেবার সুরে বলল, "কেন এভাবে ভাবছ? সবচেয়ে বড়ো কথা আমি কিছু মনে করিনি। উনি কে? আমার জীবনে ওনার কোন অস্তিত্বই নেই।"

সেদিনের মতো সমঝোতা করে দু'জনেই শুয়ে পড়ল। নির্বাণের কিছুতেই ঘুম আসছিল না। অনেক রাত অবধি জেগে ছিল। সাধারণত সারাদিনের পরিশ্রমের পর বালিশে মাথা রাখতেই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে, কিন্তু সেদিন কি যে হল! সোনালি ঘুমিয়ে পড়েছে, আর নির্বাণ তার দিকে একভাবে তাকিয়ে রয়েছে। মনের অন্দরে অপরাধবোধ কাজ করছে। সোনালি ছোট থেকে কিভাবে মানুষ হয়েছে তা তার জানা, সেখানে শেঠীর মতো একটা মানুষ তাকে বিরক্ত করেছে ভাবতেই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল।

Khelaghar | খেলাঘরWhere stories live. Discover now