মন খাঁচার পাখী নয় যে সবসময় ডানা বন্ধ করে বসবে, বিশেষ করে উঠতি বয়সে। প্রকৃতির নিয়ম মেনেই নির্বাণের মন উড়ছে। একসময় সোনালিই উড়তে শিখিয়েছে, অ্যাম্বিশন বলে নির্বাণের কোনদিন কিছু ছিল না, কিন্তু এখন আছে। ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে শুনেছে, চাকরিতে যোগ দেবার পরেই ছ-সপ্তাহের ট্রেনিং হবে - সম্ভবত বম্বে, বাঙ্গালর, বা পুনেতে, তারপর যে যার অফিসে। অফিসে প্রথম দিনটা কেমন হবে কল্পনা করতেই রোমাঞ্চিত লাগছে। অফিসে নিজের টেবিলে অবশ্যই একটা কম্পিউটার থাকবে। নির্বাণ এখনও জানে না ঠিক কি ধরনের কাজের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হবে, তবে সবই শেয়ারবাজার সংক্রান্ত। ট্রেডিং টার্মিনালের লাল নীল আলো প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হচ্ছে নির্বাণের মনের পর্দায়, প্রতি সেকেন্ডে টানটান উত্তেজনা, সর্পিল গতিতে চার্টের ওঠা-নামা, রুদ্ধশ্বাস অবস্থায় সবার দৃষ্টি স্থির কম্পিউটারের পর্দায়, মুখে একটাই প্রশ্ন - মার্কেট উপরে না নীচে? কারও ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি, আবার কেউ নখ কাটছে দাঁত দিয়ে। ডিলার্স রুমের এরকম অনেক ছবি দেখেছে সাইটে, টেলিভিশনের পর্দায়, তবে সচক্ষে এখনও প্রত্যক্ষ করেনি।
সোনালি বুঝতে পেরেছে আজ পড়াশুনা হবে না, কারণ নির্বাণের মন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাস্তবে ফিরিয়ে এনে বলল, "পরীক্ষা কিন্তু এখনও শেষ হয়নি।"
নির্বাণ লজ্জিত হয়ে জবাব দিল, "ঠিক ঠিক, কি সব আবোল-তাবোল ভাবছিলাম।"
সোনালি হাসতে হাসতেই বলল, "কি ব্যাপার বল তো তোমার? যে মুহূর্ত থেকে তোমার সিলেকশন হয়েছে, তখন থেকে তুমি কাজ ছাড়া আর তো কিছু ভাবতেই পারছ না। এই গতিতে চললে চাকরিতে যোগ দিলে তুমি তো আমাকেও ভুলে যাবে।"
নির্বাণ মুহূর্তের ভিতর সোনালির হাতটা মুঠোবন্ধ করে বলল, "কোনদিন তার সম্ভাবনা নেই, তোমায় ছাড়া আমি ভাবতেই পারি না। আমি জানি আমার জন্য কোনটা ভালো তা আমার চেয়ে তুমি অনেক ভালো জান। সোনালি তুমি আমায় পথ দেখিয়েছ, তোমার আলোতে আমি ভবিষ্যতের ছবি দেখি।"
নিমেষে পটপরিবর্তন, দু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে বিভোর। ঘন ঘন নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় দু'জনেই তপ্ত, কিন্তু সংযত। অবচেতন মনের গোপন গুদাম ঘর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নীরবে উঠে আসছে কলেজের দিনগুলো। দু'জনে একা হবার তাগিদে - কিভাবে বন্ধুদের পাশ কাটিয়ে, কলেজ থেকে বেরিয়ে নিউমার্কেটের রাস্তায় বা গঙ্গার ঘাটে উদ্দেশ্যহীনভাবে নিত্য ঘোরাঘুরি করত, সে অভিজ্ঞতা এখনও টাটকা।