সোনালি চা বানিয়ে বাবা, মা, নির্বাণকে দিয়ে নিজের চায়ের কাপ নিয়ে বসল মায়ের পাশে। সান্যালসাহেব একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন মেয়ের দিকে যেন বহুদিন পর দেখলেন, বা আজ তার ভিতর নূতন কিছু আবিষ্কার করলেন। বারবার মনে হতে লাগল--'আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন তারপর বাড়ির চেহারাই বদলে যাবে। চোখের মণির মতো যাকে এতদিন রক্ষা করে এসেছেন তাকেই নিজে হাতে তুলে দিতে হবে অন্যের হাতে।' অজানা তথ্য নয়, এটাই স্বাভাবিক। সব বাবা-মা তাই চায়, কিন্তু কেন জানি মন কিছুতেই মানতে চায় না।
মিসেস সান্যাল চায়ে চুমুক দিয়ে নির্বাণের দিকে ঘুরে বসে বললেন, "বল নির্বাণ, তোমার মুখ থেকে শুনি, বিয়ের অনুষ্ঠান সম্বন্ধে তোমার কি মত?"
নির্বাণ কিছুটা লজ্জিতভাবে বলল, "আমি কি বলব কাকিমা? সোনালি যা ঠিক করবে তাই হবে।"
মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, "দেখ তো কি মিষ্টি করে বলল।" সোনালি মাথা নিচু করতেই, নির্বাণকে বললেন, "বিয়ের অনুষ্ঠান তো তোমরা নিজেরাই কেটে ছেঁটে নিয়েছ, এবার বল হ্যানিমুন কিভাবে প্ল্যান করছ? অবশ্য এটা তোমাদের একেবারে ব্যক্তিগত ব্যাপার যদি আমাদের না জানাতে চাও, তাও ঠিক আছে।"
সোনালি মায়ের কথার ভাঁজে ভাঁজে অন্তর্নিহিত অর্থ খুব ভালো করেই বোঝে। মায়ের হাত ধরে বলল, "এভাবে বল না মা, আমাদের খুব খারাপ লাগছে। আমরা তো জানি, হানিমুনের প্ল্যানিং তুমি করে দেবে।"
নির্বাণও গলা মেলাল, "ভীষণ ঠিক। কাকিমা, আপনি এত ঘুরেছেন, কাজেই আপনি আমাদের গাইড করে দিন।"
মিসেস সান্যাল দায়িত্ব পেয়ে খুব খুশী হয়েছেন। স্বামীর সাথে এক পলক দৃষ্টি বিনিময়ের মাধ্যমে নিজের খুশীর কিছু অংশ ভাগ করে নিয়ে সোনালি এবং নির্বাণকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন, "তোমাদের হাতে কত দিন সময় থাকবে?"
সোনালির উত্তর, "ধরে নাও সাতদিন।"
"খুব ভালো। তাহলে প্রথমেই চলে যাও ফ্লোরেন্স, দু-দিন ওখানে থাকো। আমি একশোভাগ নিশ্চিত যে তোমাদের ভালো লাগবে। মিঠুর কাছে তো স্বপ্নরাজ্য, কারণ ফ্লোরেন্স পৃথিবীর ফ্যাশন ক্যাপিটাল। ওখান থেকে ট্রেন নিয়ে ভেনিস যাও। নন-স্টপ ট্রেনে ঘণ্টাদুয়েক লাগবে। স্বপ্নের শহর, প্রেম করার আদর্শ স্থান।"