শনিবার সকালে যথাসময়ে ব্যাট, প্যাড নিয়ে প্রায় চল্লিশজন ছেলে, গেম-টিচার আর মেয়েদের ভিতর একমাত্র সোনালি হাজির ময়দানে। নির্বাণ বারবার বুঝিয়েছিল না-আসার জন্য কিন্তু কে কার কথা শোনে। সোনালি সাদা প্যান্ট-শার্ট পরে, মাথায় সাদা টুপি দিয়ে একেবারে ক্রিকেটারের বেশে হাজির। আগের দিন যে পীচগুলো ওরা দেখে গিয়েছিল তারই একটাতে খেলা হবে শুনে নির্বাণের মনে হল, সোনালির পীচ পর্যবেক্ষণ বৃথা যায়নি। ক্লাবের কোচ যেমন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খেলোয়াড়দের পরামর্শ দেয়, উৎসাহ দিয়ে তরতাজা রাখে, এখন সেই ভূমিকায় সোনালি। নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্বাণের কানের কাছে উদ্দীপক কথা বলে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে।
ছাত্ররা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। যারা বল করবে তারা একদিকে, যারা ব্যাটিং-এর জন্য নাম দিয়েছে অন্যদিকে। একসময়ে নির্বাণের নাম ডাকা হল। নির্বাণ যেহেতু খুব জনপ্রিয় অনেকেই হাততালি দিলো, সোনালি তো আছেই। প্রত্যেকে ছ'টা বল খেলার সুযোগ পাবে, তার ভিতর নিজেকে প্রমাণ করতে হবে নিজের যোগ্যতা। বল হাতে দৌড়ে আসছে রাজা, নির্বাণের বন্ধু। দুর্দান্ত একটা বল, অফ-স্ট্যাম্পের গা ঘেঁষে গোলার মত বেরিয়ে গেল, নির্বাণ তখনো গার্ড নিয়ে ভালভাবে দাঁড়াতেই পারেনি। মনে মনে বুঝে গেছে, ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। যেভাবে পরাস্ত হল তাতে আর কিছু বলার থাকে না এটুকু জ্ঞান ক্রিকেট সম্বন্ধে নির্বাণের আছে। সোনালি কিন্তু হেরে যায়নি, একভাবে আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, "স্টেডি নির্বাণ, বি স্টেডি।" সোনালির কণ্ঠস্বর মাঠকে দু-ভাগ করে চিরে দিয়ে গেল, নির্বাণও হারানো মনোবলের কিছুটা অন্তত আবার ফিরে পেল। সময় নেবার জন্য সামনে পীচে ব্যাট ঠুকে নিজের জায়গায় দ্বিতীয়বার গার্ড নিয়ে দাঁড়াতেই ঝড়ের গতিতে দ্বিতীয় বল বেরিয়ে যাচ্ছিল, শেষ মুহূর্তে নির্বাণ কোনমতে ব্যাটে লাগিয়ে দিয়েছে, জানে স্লিপে ক্যাচ গেছে কিন্তু না, বল বিদ্যুৎ গতিতে মাঠের বাইরে।
সোনালি নাচতে নাচতে মাঠের ভিতর চলে এসেছে অভিনন্দন জানাতে। সোনালির দেখাদেখি আরও অনেকে ভিড় করে এলো, সবার মুখে একটাই কথা, 'দারুণ লেট-কাট'। বোলার, রাজা এসে হাত মিলিয়ে গেল নির্বাণের সাথে, পরিবেশ একেবারে পালটে দিয়েছে সোনালি। বাকী চারটে বল সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলে, নির্বাণ যখন ক্রিজ ছাড়ছে জানে সুযোগ হাতের মুঠোয়। বাইশ-গজ হাঁটতে হাঁটতে নির্বাণ অনুভব করেছে, সোনালি ইচ্ছা করলেই কামাল করতে পারে।