নির্বাণদের পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ বললেই চলে, রিভিশন পর্ব চলছে। নানা সাইট থেকে খুঁজে বার করছে হাজারও প্রশ্ন, উত্তর না-জানা প্রশ্ন খুঁজে বার করাই এখন সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। ইন্টারনেট কানেকশান থাকায় পড়ায় গতি এসেছে, তা স্বীকার করতেই হবে। ঘড়িতে চোখ পড়তেই নির্বাণের মনে পড়ল - সোনালির পনেরো মিনিটের টী-ব্রেকের সময় আগতপ্রায়। সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় সময়ের মূল্য হাজারগুণ বেড়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ কাজের পর এক কাপ চা - শরীর মন চাঙ্গা করে দেয়। বিশেষ করে যে পদ্ধতিতে সোনালিদের বাড়িতে চা পরিবেশন করা হয় - সেটা একটা শিল্প। নির্বাণ এখন আর অন্য কোথাও চা খেতে পারে না। গোলপার্কের চায়ের দোকান তো ভাবতেই পারে না। আসলে চায়ের আড্ডায় চা যে সবসময় মুখ্য ভূমিকায় থাকে তা নয়; চায়ের রঙ বা স্বাদও নয়। কিভাবে চা করা হল, কে করল, কে হাতে করে দিল, কাপের সাইজ, রঙ, পরিবেশ সবকিছুর অবদান আছে। ঘরের ভিতর এক স্বাদ, খোলা আকাশের নিচে আর এক স্বাদ। রোদে পিঠ দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া, আর বর্ষায় ভিজতে ভিজতে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে নিজেকে তরতাজা বোধ করার মাঝে বিস্তর ফারাক। নির্বাণের সবচেয়ে মধুর লাগে সোনালির ঘরের লাগোয়া বারান্দায় বসে, তার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিতে, তার তুলনায় ব্রিটেনের রানীকে যে চা পরিবেশন করা হয় তারও তুলনা চলে না। এমন-ই জাদু।
এক সুন্দর বিকেলে চায়ের আড্ডায় নির্বাণ তার দাদার বিয়ের প্রসঙ্গে বন্ধুকে জানাল, "সোনালি, দাদার বিয়ের দিন-ক্ষণ মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছে।"
সোনালি চোখ কপালে তুলে বিস্মিত হয়ে জবাব দিল, "ওমা, সে কি! কবে ঠিক হল?"
সোনালির উৎসাহ দেখে নির্বাণ তো হতবাক, চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, "কয়েকদিন হল। মোটামুটি সব ঠিকই ছিল, দিনটা চূড়ান্ত করা হয়েছে, এই আর কি।"
"কি বলছ? আমার ভীষণ উত্তেজিত লাগছে, দাঁড়াও আগে মা-কে ডাকি।" এক লাফে সোনালি ঘরের বাইরে, ছুটল মা-কে জানাতে। নির্বাণের মাথাতেই ঢুকছে না কি কারণে সোনালি এত উত্তেজিত? নির্মাল্য আর তিন্নির বিয়ে হবে, তা তো জানা। আসলে উৎসব ঘিরে সোনালির উত্তেজনা, সবেতেই পার্টীর গন্ধ পায়। কোন একটা অনুষ্ঠান হলেই হল - দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, দোল, শিবরাত্রি, ক্রিসমাস বা কোন বন্ধুর জন্মদিন, সবেতেই সোনালি সমানভাবে উচ্ছ্বসিত। প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সোনালির ভিতর এই ভাব সঞ্চারিত করেছেন সুনিপাদেবী তাতে নির্বাণের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। অতি সাধারণ ঘটনা তাঁর পরিবেশনের গুনে অসাধারণ হয়ে ওঠে। দু-এক কথা বলে কথোপকথনে অন্য মাত্রা যোগ করে দিতে পারেন অনায়াসে।