Chapter 14 | Part 3

97 3 0
                                    

সাদা চাদরে সোনালির কালো চুলের ঢাল অগোছালোভাবে ছড়িয়ে পড়েছে--হঠাৎ দেখলে মনে হবে কোন চিত্রকরের আঁকা ছবি। মুখে ভুবনভোলান অকৃত্রিম হাসি, শরীর জুড়ে আকর্ষণের মায়াজাল সময়কে ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ করে দিয়েছে। নির্বাণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে সোনালির দিকে। কারও মুখে কথা নেই, কিন্তু মনের পর্দায় নিশ্চিতভাবে খেলা করছে ভালোবাসায় মাখামাখি অজস্র টুকরো টুকরো ছবি। কিছুদিন আগেও যা স্বপ্ন বলে চিহ্নিত ছিল--এখন তা বাস্তব।

সোনালির মন হঠাৎ বাঁক নিল বন্ধু অনন্যার মুখ মনে পড়ায়। বন্ধুর জীবনে একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে যে ঝড় এসে উপস্থিত তার ফলাফল কি ভীষণ হতে পারে, তা অনুমান করে সে চিন্তান্বিত। মুখের রেখাগুলো বেয়াড়াভাবে পালটে যেতেই নির্বাণ জিজ্ঞেস করল, "কি হল সোনালি?"

সোনালি বিছানায় সোজা হয়ে বসে চুলগুলো হাতখোপা করে নির্বাণের হাত দুটো ধরে বলল, "আজ অনন্যা একটা খারাপ খবর দিল।"

নির্বাণ উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করল, "কি খবর? আমার সাথে তো ওর কথা হল, কিন্তু নরেশকে দেখলাম না।"

"ওদের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।" কথা শেষ করে সোনালি মাথা হেঁট করে এমনভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বসল যেন সে নিজেই দায়ী বন্ধুর বিবাহিত সম্পর্কের পরিণতির জন্য। নির্বাণ ঝাঁকিয়ে সোজা করে বসিয়ে বলল, "আপসেট হতে নেই। কেন এমন হল--সে বিষয়ে কিছু বলল?"

সোনালি হাজার চেষ্টা করেও চোখের জলের স্রোত আটকাতে পারল না। ভাঙা গলায় জানাল, "অনন্যা কিছু বুঝতেই পারেনি। এই বিষয়ে ওদের দু'জনের ভিতর কোন কথাও হয়নি। নরেশ কিছুদিনের জন্য তাদের দেশের বাড়ি গিয়েছিল। তখন অনন্যা ওর মায়ের বাড়ি থেকে অফিস করছিল। দু-দিন আগে হঠাৎ ডিভোর্সের নোটিস পাঠিয়ে দিয়েছে।"

নির্বাণ বিরক্ত হয়ে বলল, "স্টুপিড! নরেশ কি পাগল হয়ে গেল নাকি?"

বিবাহবার্ষিকীর সুর কেটে যাবে মনে করে সোনালি ঠিক করেছিল আজ কথাটা তুলবে না, কিন্তু কি যে হল--নিজের অজান্তেই বলে ফেলল। মানুষের মন মানুষই বোঝে না। মনের রূপ বদল বোধহয় প্রকৃতির সাথে পাল্লা দেয়। মোমবাতির আলো সোনালির এখন আর ভাল লাগছে না, কেমন যেন গা ছমছম করা ভাব। অথচ সারা সন্ধ্যা কি ভীষণ মনোযোগের সাথে নিজে হাতে একটা একটা করে মোমবাতি জ্বালিয়েছে। সোনালি চোখের জল মুছতে মুছতে নির্বাণকে করুন স্বরে জিজ্ঞাসা করল, "আমাদের সম্পর্কের পরিণতি কখনো এমন হবে না তো?"

Khelaghar | খেলাঘরWhere stories live. Discover now