Chapter 7 | Part 5

108 5 0
                                    

চিরাচরিত প্রথায় সেদিনের মতো সমঝোতা করে ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন দু'জন। কিছুক্ষণের মধ্যে সান্যালসাহেব সারাদিনের কাজের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু কিছুতেই দু-চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না সুনিপাদেবী। মন ভারাক্রান্ত। নিজের পরিচিত বিছানায় স্বামীর পাশে শুয়েও নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছিল না। সাবধানী মন অবিশ্বাসের ঝড় তুলেছিল, আত্মবিশ্বাসে বারবার আঘাত করছিল, সুনিপাদেবী সন্দিহান। মনে মনে মন চলে গিয়েছিল অনেক পিছনে, তবুও জোর করে শরীরটাকে সাজিয়ে রেখেছিলেন বিছানায়। নানা অছিলায় মনকে পোষ মানাবার চেষ্টা করছিলেন। নিজেকে বশে রাখবার যা যা মন্ত্র ছোট থেকে শিখেছিলেন সব একে একে আওড়াচ্ছিলেন। একসময় মন শান্ত হল। উপলব্ধি করলেন যে, তাঁর সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে, কাজেই চটজলদি সমাধান সম্ভব নয়। একদিকে একঘেয়ে পুরনো সংস্কার, অন্যদিকে নূতন প্রজন্মের হাজারো প্রশ্ন, সত্যকে জানবার অদম্য আগ্রহ, এবং কোনটাই অহেতুক নয়। সংসারের মঙ্গল কামনায় নিজেকে উৎসর্গ করে সেতু বন্ধনের কাজ করে যেতে হবে, সবার মন রেখে চলতে হবে, কিন্তু নিজের মনের খবর নেওয়া যাবে না।

একসময় নিজেকে এই সমাজব্যবস্থার বাইরে বলে ভাবতেন, কখন যে নিজের অজান্তে সেই গর্তে ঢুকে পড়েছেন তার হদিশ নেই। ভালোবাসার পাশা খেলতে খেলতে কখন ঘুঁটি হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন আজ আর মনে পড়ে না, মনে করতেও চান না।

সোনালিও নিজের বিছানায় চুপচাপ শুয়ে ছিল, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল নেই। বারবার মনে হচ্ছিল বাবাকে ওভাবে প্রশ্ন করা খুব অন্যায় হয়েছে। মায়ের সাবধান বানী বোঝা উচিত ছিল। তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা একেবারেই উচিত হয়নি। যাইহোক, যা হবার হয়ে গিয়েছে, দ্বিতীয়বার আর এই বিষয়ে কৌতুহল প্রকাশ করবে না মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো, এবং আগামীকাল সকালে প্রথম কাজ হবে দুজনকে 'সরি' বলা।

পরদিন ঘুম ভাঙতেই সোনালির নিজেকে অনেক তরতাজা লাগল। বসার ঘরে এসে দেখল মা খবরের কাগজে মন দিয়েছে। সোনালি চুপিচুপি মা-কে পিছন থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে চমকে দিয়ে বলল, "সরি মা।"

Khelaghar | খেলাঘরWhere stories live. Discover now