নির্বাণ সিদ্ধান্তে খুশী, চোখে মুখে তার ছাপ স্পষ্ট, পারলে এখনি মাঠে নেমে পড়ে। এবার সোনালির পালা। এম.বি.এ. কোর্সে ভর্তি হবার সময় সোনালির লক্ষ্য ছিল কোন বহুজাতিক ব্যাঙ্কিং বিভাগে চাকরি, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সোনালির মনে পরিবর্তন এসেছে, এখন চায় কোন এন.জি.ও. সংস্থায় নিজেকে ব্যস্ত রাখতে, মানুষের কাজে আসতে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে বাবা-মায়ের সামনে নিজের দুটো ইচ্ছা ব্যক্ত করে জানতে চাইল - কোন পথ তার পক্ষে সঠিক হবে?
সান্যালসাহেবের বক্তব্য, "দুটোই ভাল, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রথমে নিজের আর্থিক সচ্ছলতার দিকে নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন। নিজেকে শক্ত জমির উপর প্রতিষ্ঠিত না করতে পারলে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও আপোষ করতে হয়। যার ফলে কিছুতেই নিজের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। কোনও এন.জি.ও সংস্থাতে যোগ দেবার সময় যদি টাকার অঙ্কের কথা ভাবতে হয়, তাহলে কিন্তু প্রধান উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুতি ঘটবে, সেটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। তার থেকে নিজের উপার্জনের একটা অংশ দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে, দিনের কোন একটা সময় নিয়ম করে তাদের কাজে ব্যয় করলেও সাহায্য হতে পারে। তোমার কি মত সুনিপা?"
"আমি একেবারে একমত। জীবনে প্রথম প্রয়োজন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, নিজে নড়বড়ে হলে কাউকে পথ দেখানো যায় না। আমার ভেবে গর্ব বোধ হচ্ছে, মিঠু এত সুন্দর করে ভেবেছে।"
মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, "পরার্থে কাজ অবশ্য কর্তব্য - এই বিষয়ে কোন দ্বিমত থাকতে পারে না। তোর ভিতর সেই ইচ্ছা আছে, কাজেই নিশ্চয়ই মানুষের পাশে দাঁড়াবি, তবে তার আগে নিজেকে শক্তপোক্ত করে নেওয়া ভীষণ প্রয়োজন। অন্যকে সাহায্য করতে গেলে শুধু টাকা যথেষ্ট নয়, সবচেয়ে আগে প্রয়োজন খাঁটি মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করা। নিজের জীবনযাত্রার ভিতর দিয়ে বহু শিক্ষা দান করা যেতে পারে, যা হয়তো দশ-হাজার টাকার কোর্স-ফি দিয়ে হয় না। সদিচ্ছাকে জাগিয়ে রেখে কাজ শুরু কর, দেখবি হাজার পথের সন্ধান পাবি। উদ্দেশ্য সৎ হলে ফিরে তাকাতে হয় না।"