যাদবপুরের গলি পার হয়ে বড়ো রাস্তায় পৌঁছে গাড়ির গতি বেড়ে গিয়েছে। ভিতরের ঠাণ্ডা পরিবেশে অনিতার মন আগের তুলনায় অনেক স্বস্তি পেয়েছে, দমবন্ধ ভাব কেটে গিয়েছে। সোনালি বাড়ি ঢুকে তাকে নিয়ে সোজা চলে গেল নিজের ঘরে। তাকে ঘরে আরাম করে বসিয়ে নিজে বাইরে এসে মা-কে ছোট করে ঘটনাবলীর সারাংশ শোনাল। কিছুসময় পর ট্রে-তে কোক আর চিপস নিয়ে অনিতার মুখোমুখি বসে পুরো ঘটনার বিবরণ জানতে চাইল। খোলামেলা পরিবেশে অনিতা আগের চেয়ে সহজ হয়েছে ঠিক, কিন্তু প্রেমিকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি একই আছে। অনিতা কোকের গ্লাস হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে দেখে সোনালি ভরসা দিয়ে বলল, "কি হয়েছে আমায় বল, নাহলে বুঝব কি করে? তোর সমস্যার সমাধান হবে কিভাবে?"
অনিতা চোখ ভরা জল নিয়ে উত্তর করল, "রাজ আমায় আর ভালোবাসে না।" চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। দেখে মনে হল--তার জীবনের যাবতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার সেখানেই সমাপ্তি। ভালোবাসার কাঁটা একবার বিঁধলে সহজে ছাড়তে চায় না। তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে বিচার করলে মনে হবে--আমরা নিজেরাই তার থেকে বেরুতে চাই না, ভালোবাসাকে ভালোবেসে কষ্ট পেতে চাই। কার্যকারণের প্রতি অশ্রদ্ধা বশত বিষয়ের বিশ্লেষণ করতে মন চায় না, বরং অবহেলায় ভাসতে চায় কল্পনার ভেলায়।
সোনালি অনিতার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উঁচু করে তুলে প্রশ্ন করল, "এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুলি কি করে? রাজ তোকে বলেছে?"
"না, ওর এক বন্ধু আমাকে বলেছে।"
"রাজকে সোজাসুজি জিজ্ঞেস করছিস না কেন? তাহলেই তো সব মিটে যায়।"
অনিতা নিচু স্বরে জবাব দিল, "আর কোন লাভ নেই সোনালিদি, যা হবার হয়ে গিয়েছে।"
সোনালির অভিজ্ঞতা এই বিষয়ে অনিতার চেয়ে ঢের বেশী, তাই জোরের সাথে বলল, "বোকার মতো কথা বলিস না, সব শেষ হয়ে গিয়েছে! শেষের কি দেখলি এর ভিতর? কতদিন চিনিস তুই রাজকে?"
"চার বছর।"
এবার সোনালি হালকা ধমকের সাথে বলল, "বাঃ! চার বছর ধরে যাকে চিনিস তার ওপর ভরসা না করে, তার এক বন্ধুর কথা বিশ্বাস করে বসলি? এর পিছনে কি যুক্তি আমায় বোঝা তো?"