নির্বাণ প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে প্রথম হবার সংকল্প নিয়ে, নিজের সত্তা শেয়ারবাজারে লগ্নী করে একই বৃত্তে ক্রমান্বয়ে পাক খেয়ে চলেছে। জগতের সমস্ত সমস্যার সমাধান খুঁজছে ল্যাপটপের স্ত্রীনে, মার্কেটের তাণ্ডব নৃত্যে, আর পৃষ্ঠপোষকদের ভিড়ে। পরপর কয়েকটা 'কল' দারুণ কাজ দেওয়ায়, নির্বাণের জনপ্রিয়তা অফিসে এখন তুঙ্গে। প্রথম সারির ম্যানেজার থেকে ডিলাররুমের স্টাফ, ক্লায়েন্ট সবাই তার কথায় বাজি ধরতে রাজি।
মার্কেট যে পিচ্ছিল ঢালের চেয়েও বিপদজনক তা নির্বাণের অজানা নয়, কিন্তু সাফল্যের নেশা যখন আষ্টেপৃষ্ঠে বোধবুদ্ধিকে বেঁধে ফেলে তখন যুক্তি বা বিচারক্ষমতা জড়িয়ে যায় জটিলতার জটে। এবং সেই ফাঁকে সুযোগের অপেক্ষায় ওত পেতে থাকা অহংকার, সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে; সযত্নে সাজানো সমস্ত অঙ্ক নিমেষে তছনছ করে দেয়।
এক ফ্ল্যাটে একসাথে বাস করেও, সোনালি আর নির্বাণের দেখা হওয়া এখন প্রায় আকস্মিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোনালি রোজ সকাল আটটায় অফিসে বেরিয়ে যায়, নির্বাণ তখন ঘুমায়। নির্বাণের বাড়ি ফিরতে রাত একটা বেজে যায়। সোনালি ঘুম চোখে কোনমতে দরজা খুলে দিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রথম প্রথম সোনালি না খেয়েই অপেক্ষা করত একসাথে রাতের খাবার খাবে বলে, কিন্তু একসময়ে তাতেও ছেদ পড়ল। নির্বাণ অবশ্য ফিরতে দেরী হবে বুঝলে সোনালিকে বারবারই শুয়ে পড়তে বলত, কিন্তু তার মন তাতে সায় দিত না। ছোটবেলা থেকে দেখেছে--মা কিভাবে বাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করত, সেই স্মৃতি মাথায় খোঁচা দিত বলেই হয়তো জেগে থাকত। নির্বাণকে যাতে চাবি ঘুরিয়ে শূন্য ঘরে না ঢুকতে হয়।
শনিবার নির্বাণকে অফিস যেতে হয়, আর সোনালি নিজের মা-বাবার সাথে সময় কাটায়। রবিবার ছুটির দিন, কিন্তু সোনালি প্রতি রবিবার নিয়ম করে মিসেস সরকারের সাথে এন.জি.ও. সংস্থার বিভিন্ন ওয়ার্কশপে যায়। শূন্য থেকে পনেরো বছর বয়সের বস্তির ছেলেমেয়েদের অবস্থার উন্নতির জন্য নানারকম কাজ শুরু হয়েছে, তাতে সোনালির বড়ো ভূমিকা আছে—নিজে ইচ্ছা করেই সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। নির্বাণ আর সোনালির, নিজেদের জন্য সময় বলতে শুধু শনিবার সন্ধ্যা। সোনালি ইদানীং ক্লাবে বা পার্টীতে যেতে পছন্দ করে না, কিন্তু নির্বাণকে ইচ্ছা না থাকলেও কাজের খাতিরে যেতে হয়। মাসের ভিতর হয়তো একটা বা দুটো শনিবারের সন্ধ্যা নিজেদের হেফাজতে থাকে।