Chapter 10 | Part 2

68 3 0
                                    

মিসেস সান্যাল নিজের হাতে মেয়েকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। অসম্ভব সুন্দর দেখতে লাগছিল সোনালিকে। আয়নায় নিজেকে দেখে মুগ্ধ। এত গয়না কোনদিন পরেনি সোনালি, তাই প্রথমে অস্বস্তি লাগছিল, হালকা আপত্তিও করেছিল, কিন্তু মায়ের আত্মবিশ্বাসের কাছে খুশী হয়ে হার মেনে নিয়েছিল।

মিসেস সান্যাল মেয়েকে আদর করে বললেন, "আমার তো মনে হচ্ছে আজ তোরই বিয়ে, দেখিস তোকে যেন না বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেয়, তাহলে নির্বাণ একেবারে বেচারা হয়ে যাবে।"

সোনালি লজ্জিত হয়ে বলল, "কি যে বল না মা।"

ঠিক সন্ধে সাতটায় সোনালির ফোন পেয়ে নির্বাণ এল পাড়ার মোড়ে। অন্য দিন হলে সোনালি একাই চলে যেতে পারত, কিন্তু চোখ ঝলসান পোশাক পরে একা হেঁটে যেতে খুব অস্বস্তি লাগছিল। সোনালি আগেই নির্বাণকে বলে রেখেছিল পৌঁছে ফোন করবে। প্রথম দর্শনেই নির্বাণ সম্মোহিত। শাড়িতে সোনালিকে আগে কয়েকবার দেখেছে, কিন্তু আজকের সাজ পুরানো সব রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। গাড়ি থেকে বাড়ি অবধি রাস্তায় দু'জনের কেউই কোন কথা বলেনি। সোনালি শাড়ি সামলাতে ব্যস্ত ছিল, আর নির্বাণ বান্ধবীর পাহারায়। গলির দু-ধারে প্রত্যেক বাড়ি থেকে জোড়া জোড়া চোখ অনুসরণ করছিল সোনালির পদযাত্রা। বাড়ি ঢুকতেই প্রশংসার বন্যায় ভেসে গেল সোনালি, সবার মুখে একটাই কথা - দারুণ দেখাচ্ছে। মিসেস সান্যালের শৈল্পিক ছোঁয়া জাদুদন্ডের কাজ করেছে। বলতে গেলে সোনালিকেই বাড়িতে বরণ করে নেওয়া হল। সোজা করে বেনারসি শাড়ি পরেছে, আঁচলে বাঁধা এক গোছা চাবি। দু'হাতে মেহেন্দি, গলায় নেকলেস, কানে-হাতে মানানসই পুরানো দিনের গয়না। সাবেকি ঘরানায় আধুনিকা সোনালি, দারুণ মিশেল। নির্বাণ ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগের সাথে সোনালির অঙ্গভঙ্গির সাবলীল ছন্দ উপভোগ করছিল, আর গর্বে বুক ফুলে উঠছিল বান্ধবীর জন্য।

সোনালিকে বিয়ে করতে সে প্রস্তুত, আর কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। যুক্তি, তর্কের পালা শেষ। হাজার ওয়েবসাইট যার উত্তর দিতে পারেনি, গল্পে-উপন্যাসে যার উল্লেখ থাকলেও সঠিক কোনও ঠিকানার সন্ধান পায়নি, নিজেকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বিয়ে-ভালোবাসা-বন্ধুত্বের জটিল তত্ত্বের সমাধান করতে গিয়ে হতাশ নির্বাণ - হঠাৎ এক ঝলক সোনালির ভাববিহ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে সহজ উত্তর পেয়ে গেল। বিয়ে মানে বন্ধু পাওয়া নয়, শুধু মাত্র একটা মেয়েকে পাওয়া নয়, একজন প্রেমিকা পাওয়াও নয়। সব কিছুকে একসাথে, চাওয়া-পাওয়ার জমাট ভাবের নাম বিয়ে। যাকে নিয়ে গর্ব বোধ হবে, যার আকর্ষণ কখনো কক্ষচ্যুত হতে দেবে না, যার চোখের চাহনিতে নিত্য স্নানের নির্মল পবিত্রতা অনুভূত হবে, যার চুলের খেয়ালিপনা শরতের মেঘকে হার মানাবে, যার কথার সুরে মনে বসন্তের বাতাস বইবে, হেমন্তের আগমনী বার্তা পায়ে পায়ে চলবে, যে রোজকার হোলি খেলার সখী, সবসময়ের সাথী, দৈনন্দিনতার বেড়া ভেঙে মৃত্যুশয্যায় একমাত্র বন্ধু, আরও কত কি ... !

Khelaghar | খেলাঘরDonde viven las historias. Descúbrelo ahora