Chapter 15 | Part 4

67 4 2
                                    

সোনালির মায়ের ওপর অগাধ আস্থা। চুপ করে তাঁর কথা শুনছিল, পরিস্থিতি অনুধাবন করার চেষ্টা করছিল। মিসেস সান্যাল মেয়ের মনের জট কাটাতে আবার শুরু করলেন, "নির্বাণের পারিবারিক প্রেক্ষাপট সবসময় মাথায় রাখতে হবে, ও কি পরিবেশে বড়ো হয়েছে? জীবনের উদ্দেশ্য বলতে কি বুঝত? তোর সাথে পরিচয়ের আগেও যে ওর একটা ব্যক্তিগত জীবন ছিল--তা অস্বীকার করা যায় না। একজনকে বিচার করতে গেলে তার সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিচার করতে হবে।"

সোনালির মনে ঝিলিক দিয়ে গেল কলেজের ল্যাবরেটরিতে নির্বাণের কথাগুলো--অ্যাম্বিশন বলতে তখন তার কাছে কিছুই ছিল না। পরবর্তীকালে, সোনালি তার ভিতর স্বপ্নের বীজ বপন করেছে, নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে নির্বাণকে এগিয়ে দিয়েছে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে। আজ যখন নির্বাণ সাফল্যের ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে এগিয়ে চলেছে, তাতে সোনালি আহত হচ্ছে সবচেয়ে বেশী। স্বপ্ন বাস্তব হলে মুশকিল, আর না-হলে তো আফসোসের শেষ নেই। দোটানায় জেরবার সোনালির মন।

মেয়েকে আশ্বস্ত করতে মিসেস সান্যাল শুরু করলেন, "নির্বাণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বুঝতে পারবি--ও এক বিরাট সম্ভাবনার মুখোমুখি। সুযোগ ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে--অফিসে সিনিয়র ম্যানেজাররা বাহবা দিয়ে পলে পলে গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবার মিলিত উৎসাহে ও আরও জোরে দৌড়োবার চেষ্টা করছে; এটাই তো স্বাভাবিক। অন্যায় কোথায়?"

মেয়ের মুখের ভাব অনুসরণ করে বললেন, "আর কিছুদিন পর তোরা নিজেদের ফ্ল্যাটে গৃহপ্রবেশ করবি, নূতন গাড়ি বুক করবি, পার্টী দিবি। নির্বাণের ইচ্ছা হতেই পারে সবাইকে ডেকে দেখাতে যে, বিয়ের পর কেমন রেখেছে সোনালিকে? এতে দম্ভ নেই, ভালোবাসা আছে। মনে হতে পারে উচ্ছ্বাস বড়ো বেশী উগ্র, বা প্রকাশভঙ্গী আলাদা। আমার মন কিন্তু তা বলে না, বরং এই বয়সে যদি উচ্ছ্বাস না থাকে, তবে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে কি করে? জীবনে বড়ো হতে হলে, সফল হতে হলে, এই উদ্যমের প্রয়োজন আছে। আজকের উচ্ছ্বাস আগামী দিনের মূলধন হবে না--তা কে বলতে পারে? জীবন যে সবসময় সরলরেখায় চলে না তা তুই নিশ্চয়ই জানিস। তার মানে এই নয় যে, নির্বাণ গতকাল রাতে যা করেছে আমি তাকে সমর্থন করছি, তবে লঘু পাপে গুরু দণ্ড না হয় তাও মাথায় রাখতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে প্রধান কি? ভালোবাসা। নির্বাণ তোকে ভালোবাসে তাতে কোন খেদ নেই।"

Khelaghar | খেলাঘরDonde viven las historias. Descúbrelo ahora