পরদিন সকালে নির্বাণ অফিসে পৌঁছাতেই কনফারেন্স রুমে চরম ব্যস্ততা লক্ষ্য করল। মার্কেট খোলার আগে টেকনিকাল অ্যানালিস্টরা সেইদিন শেয়ারবাজার কোন দিকে যেতে পারে তার ওপর তাদের মতামত যুক্তির সাহায্যে ব্যক্ত করছে। বিভিন্ন 'কল' সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। বিভিন্ন ব্রাঞ্চ অফিস থেকেও নানান পরামর্শ আসছে। ঘড়িতে ঠিক ন'টা বাজতেই পাঁচটা কল ডিলারদের জানিয়ে দেওয়া হল, সাথে সাথে তারা যে যার ডেস্ক থেকে ক্লায়েন্টদের ফোন করে জানাতে থাকল।
মার্কেট খুলতেই ব্যস্ততা তুঙ্গে, দু-কানে ফোন নিয়ে ডিলারদের কম্পিউটারের কিবোর্ডে হাত চলছে ঝড়ের গতিতে। কেউ কিনছে কেউ বেচছে, কেউ ক্যাশ মার্কেটে, কেউ ফিউচারে সওদা করছে, আবার কেউ 'অপশান' মার্কেটের দোরগোড়ায় পৌঁছে দ্বিধাগ্রস্ত। নির্বাণ এই নেটওয়ার্কে নূতন, তাই গতির সাথে পাল্লা দিতে একটু সময় লাগছে। তাকে ডিলার্স রুমে বসতে হবে না ঠিকই, তবে কাজের প্রত্যেকটা ধাপ নিজে জানা ভীষণ জরুরী। উত্তেজনায় টানটান প্রত্যেক মুহূর্ত। সবার অপলক দৃষ্টি কম্পিউটার স্ক্রিনে স্থির--লাল, নীল, সবুজ রঙের ভেলকি কারও মনে আনন্দের হিল্লোল তুলছে, কেউবা নিরানন্দে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ভাবছে--কখন মার্কেট গতি পরিবর্তন করবে? নির্বাণও রক্তচাপ অনুভব করছে, তবে উত্তেজনায় মন মাতোয়ারা। মনে পড়ছে বম্বেতে ট্রেনিং-এর শেষদিনে পার্টীতে এক ফ্যাকাল্টি বলেছিলেন, "তোমরা জীবনে কে কি করবে, কতটা সফল হবে জানি না, তবে হলফ করে বলতে পারি শেয়ারবাজারের সাথে যুক্ত থাকলে কখনো 'বোর' হবে না।"
তাঁর কথার সত্যতা এই মুহূর্তে ভীষণভাবে উপলব্ধি করছে নির্বাণ। মার্কেটের শুরুতে যে পাঁচটা 'কল' দেওয়া হয়েছিল, টেকনিকাল অ্যানালিস্টদের রিসার্চ রুমে সেই সব কোম্পানির বাজারদরের ওপর অতন্দ্র প্রহরায় রয়েছেন এক্সপার্টরা। বাজার কারও বশে নয়, বাজারের বশ সবাই। কয়েকটা 'কল' ভালই কাজ করছে, অন্যগুলো একেবারে উলটো পথে, তাকে ধরে নিয়ে এসে লাইনে দাঁড় করানোর ক্ষমতা কোন দিদিমণির নেই। স্ক্রিনে ভেসে উঠছে নূতন 'কল।' মার্কেটিঙের যুগ তাই প্রত্যেক কলের নামকরণ করা হয়েছে--'স্টার কল', 'গোল্ডেন কল', 'দিনের সেরা', 'বি.টি,এস.টি', এমন আরও অনেক।