নির্মাল্য আর তিন্নির বিয়েকে ঘিরে নির্বাণদের বাড়িতে পুরাদস্তুর উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে, আর মাত্র দু'দিন বাকী। বাড়ি ভরতি লোক। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, বারবার চা, কাজের বাড়িতে যা যা হয় আর কি। নির্বাণের বাবা-মা মাঝে একদিন সোনালিদের বাড়িতে গিয়ে সান্যাল দম্পতিকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন। দুই পরিবারে খুব আলাপ জমে গিয়েছে। এক ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে গিয়ে আর এক ছেলের ভবিষ্যৎ সুখের আগাম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এসেছেন মলিনাদেবী। সোনালি গাড়ি করে তাদের বাড়িতে ছেড়ে এসেছিল। মাঝপথে চমক দেবার জন্য সবাইকে নিয়ে হাজির হয়েছিল গঙ্গার ঘাটে। গাড়ি থেকে সবাইকে নামিয়ে, নির্বাণের বাবার কাছ থেকে আইসক্রিম খেয়ে তারপর ছেড়েছিল। সোনালির মিষ্টি ব্যবহার স্বভাবতই তাদের মন কেড়েছিল, ফেরার পথে মলিনাদেবী আদর করে তাকে বলেছিলেন, "তুমি আমার আর এক মেয়ে।"
বিয়ের দিন সকালবেলা সোনালি হাজির নির্বাণদের বাড়িতে। পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সামান্য সময়ের ভিতরেই দারুণ আলাপ জমে গিয়েছিল সোনালির। নির্মাল্যর সাথে তো শুরু থেকেই খুব সুন্দর সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। সোনালির পরামর্শ এ বাড়িতে যথেষ্ট কদর পায়। অনিতা তো পোশাকের ব্যাপারে তার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। জমিয়ে আড্ডা চলল, আর তার সাথে সন্ধ্যার পরিকল্পনা। সোনালির কোথাও কোন জড়তা নেই, যে কোন পরিবেশে নিজেকে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে পারে। জীবনকে উপভোগ করতে জানে। কলকাতায় শীতের শুরু, আবহাওয়া ভীষণ মনোরম - একটা বাড়তি আনন্দ।
নির্বাণের কাছে দাদার বিয়ে ক্রমশই অর্থবহ হয়ে উঠল। এত কাছ থেকে আগে কোনদিন বিয়ের আয়োজন বা চারপাশে সাজ-সাজ রব প্রত্যক্ষ করেনি। বারবার মনে হল - একটা বিয়েকে উপলক্ষ্য করে কত আয়োজন, জল্পনা-কল্পনা, উৎসাহ। সবাইকে সাক্ষী রেখে দু-জন মানুষ অঙ্গীকারবদ্ধ হবে - তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আনন্দ-দুঃখ, মান-অপমান সব অনুভূতি ভাগ করে নেবার জন্য। নির্বাণের কাছে ব্যাপারটা বেশ চাপ বলেই মনে হল। দু-চারদিন বাদে যখন চারপাশে আর কেউ থাকবে না, শুধু দু'জনে মুখোমুখি, তখন সেদিনের অঙ্গীকার শিথিল হয়ে যাবে না তো? রোজকার জীবনযাত্রায় মেজাজ তরতাজা থাকবে তো? হিসাবের খাতা প্রেমের মাঝে পাঁচিল তুলে দাঁড়াবে না তো? নির্বাণ কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে।
![](https://img.wattpad.com/cover/157510615-288-k332721.jpg)