বসুন্ধরার সামনে বসে বসে বিরক্ত হচ্ছি । একটু পরে আযান দিয়ে দিবে অথচ এখন জ্যামে আটকে আছি । এমনটা খুব একটা হয় না কিন্তু আজকে কী হল কে জানে ! এমন ভাবে কেন আটকে আছে রিক্সাটা ! সামনে এতো গুলো গাড়ি আর রিক্সা দেখছি যে মনে হল না আজকে সময় মত বাসায় পৌছাতে পারবো । নীতুকে হয়তো আজকে একা একা ইফতার করতে হবে !
নীতুর কথা মনে হতে না হতেই ফোন বেজে উঠলো । ফোনটা হাতেই ছিল । মোবাইল স্ক্রিনে নীতুর হাস্যজ্বল ছবিটা ভেসে উঠলো আমার , ফোন রিসিভ করতেই নীতুর কন্ঠ শুনতে পেলাম । বলল, কই তুমি আর কত সময় লাগবে !
আমি কোন মতে বললাম, শোন আজকে মনে হয় না যে আমি সময় মত পৌছাতে পারবো । তুমি ইফতার করে নাও । আমি এসে করছি !
নীতু একদমই চুপ হয়ে গেল । আমি কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করলাম বটে কিন্তু কোন জবাব দিলো না । দেখলাম ফোন কেটে দিয়েছে !
আমি আবারো বার কয়েক ফন দেওয়ার চেষ্টা করলাম বটে কিন্তু কোন কাজ হল না । বুঝলাম যে মহারানী রাগ করেছে । শেষে মেসেঞ্জারে নক দিলাম !
ভেবেছিলাম যে এখানেও কোন জবাব দিবে না । তবে জবাব এল সাথে সাথেই । আমি বললাম, আচ্ছা এটা আমার দোষ?
নীতু বলল, না তোমার দোষ কেন হবে ! আমার দোষ সব !
-আরে বাবা আমি কি বলেছি যে তোমার দোষ । এই দোষ হচ্ছে জ্যামের !
-হ্যা দুনিয়ার কেউ আর বাসায় আসে রমজানে । কেবল তুমিই একা অফিস কর !
-আরে বাবা আজকে এমন ভাবে জ্যাম পড়বে আমি বুঝেছি নাকি ! বুঝলে তো তোমাকেই বলতাম আমার অফিসে চলে আসতে ! প্লিজ রাগ করে না আমার লক্ষ্যি বৌ ! তোমাকে ছাড়া কী আমার একা একা থাকতে ইচ্ছে করে বল ! তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার ! আমি চলে আসবো । এই দেখো জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে !
দেখলাম নীতু যেন একটু গলল । বলল, হয়েছে হয়েছে । এতো ঢং করতে হবে না । আসো জলদি !
-তুমি কিন্তু আবার না খেয়ে বসে থেকো না । ইফতার করে ফেলো । আমি রাস্তা থেকে কিছু কিনে নিচ্ছি । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
জ্যামে বসতে হল আরও কিছু সময় । রাস্তার পাশ থেকে হালিম কিনলাম, আরও কিছু ইফতার কিনলাম বটে কিন্তু খুললামই না । রিক্সাতে থাকতেই আযান দিয়ে দিল । কেবল পানি খেয়ে ইফতার করলাম । মোবাইল বের করে নীতুকে মেসেজ পাঠালাম যে ইফতার করেছি । তুমিও কর !
বাসায় যখন পৌছালাম তখন প্রায় সাতটা বেজে গেছে । দরজায় টোকা পড়ার প্রায় সাথে সাথেই দেখলাম দরজা খুলে গেল । নীতু কেমন মলিন মুখে দাড়িয়ে সামনে । সারাদিনের অফিস তারপর বাসায় এসে ইফতার সাজানো, রোজার ক্না্তি সব মিলিয়ে একটা ক্লান্ত চেহারা ! আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো ।
আমি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দেখলাম টেবিলে সব ইফতার সাজানো । সেগুলো যে একদম ধরা হয় নি সেটা আমি এখান থেকেই বুঝতে পারছি । ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, ইফতার কেন খাওনি ?
-পানি খেয়েছি ।
-কেবল পানি কেন খাবে ! আজিব !
নীতু শান্ত কন্ঠে বলল, তা জনাব আপনি পানি ছাড়া আর কিছু খেয়েছেন ? হালিমের প্যাকেট তো খোলেনই নি ! বেশি কথা বার্তা না বলে খেতে এসো !
আমি হাত মুখে ধূয়ে টেবিলে খেতে বসলাম । ততক্ষনে দেখি নীতু আবারও সব কিছু চট করে ওভেনে গরম করে নিয়ে এসেছে ।
আমি যখন আবার নীতুর মুখের দিকে তাকালম তখন হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম যে ওর মুখটা কেমন যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এরই ভেতরে ! একটু আগের সেই ক্লান্তি মনমরা ভাবটা একদম নেই । টেবিলে খাওয়া শুরু করলাম যখন তখন নীতু বলল ইফতার কিনেও খাও নি কেন শুনি?
চট করেই জেন জানি জবাবটা দিতে পারলাম না । কিছু সময়ে চুপচাপ রইলাম । তারপর বলল, কেন জানি খেতে ইচ্ছে করছিলো না । বারবার মনে হচ্ছিলো যে তুমি না খেয়ে বসে থাকবে !
নীতু কিছু সময় আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আমারও ঠিক এই ব্যাপারটাই মনে হচ্ছিলো । তুমি খাবে না আমাকে ছাড়া !
আমি এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে একটা আলতো করে চুমু খেলাম । তারপর বললাম কাল থেকে যার অফিস আগে শেষ হবে সে অন্যের অফিসের দিকে রওয়ানা দিবে । তারপর দুজন এক সাথে ফিরবো বাসায় । যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে দুজন একসাথে রাস্তা কিংবা কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়বো ! ঠিক আছে?
নীতু হাসলো । আইডিয়াটা ওর পছন্দ হয়েছে !
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।