শামা খুব ভাল করেই জানে আমাকে কিভাবে কুপোকাত করতে হয় । এর মানে হচ্ছে আমার কি পছন্দ না পছন্দ আমি অনলাইনে কি লিখি না লিখি সেসব শামা খুব মনযোগ দিয়ে সেসব পড়ে । নয়তো এমন ভাবে আমার সামনে সে হাজির হত না মোটেই । গতকাল ক্লাস শেষ করে হঠাৎ শামা নিজ থেকেই আমার কাছে এসে বলল, কালকে বইমেলাতে যাবা নাকি ?
প্রতিদিন বিকেল বেলা আমার টিউশনী থাকে । আর সকালে ক্লাস । তাই চাইলেও সকাল বিকাল আমি মেলাতে যেতে পারি না । কেবল মাত্র ছুটির দিন গুলোতে যাওয়ার সুযোগ হয় । আমি বললাম, হ্যা কাল যাবো ভাবছি ।
শামা বলল, আমিও যাবো ভাবছি । একা একা ঘুরতে বোর লাগবে। তুমি কখন যাবা ?
আমি বললাম। এই তো বিকেল বেলা । তিনটা সাড়ে তিনটার দিকে ।
শামা হাসলো । তারপর বলল, আচ্ছা আমি পৌছে যাবো ।আজকে মেলার গেট দিয়ে ঢুকতেই ওর ফোন এসে হাজির । আমাকে জানালো যে আগেই চলে এসেছে । প্যাভিলিয়ান একের সামনে আছে । আমি সেখানে হাজির হতেই শামাকে দেখতে পেলাম । ছোটখাটো একটা ধাক্কা খেলাম ওকে দেখে ।
শামার হাত ভর্তি মেহেদী দেখতে পাচ্ছি । একেবারে কড়া রং । সম্ভবত এখানে আসার আগেই মেহেদি দিয়েছে । চোখে কাজল দেওয়া । চুপ গুলো ছাড়া । আকাশী রংয়ের একটা কামিজের সাথে ধবধবে সাদা লেগিংস পরে আছে । সেই সাথে সাদা ওড়না । মুখে একেবারেই মেকআপ নেই । ঠোটে হাকলা রংয়ের লিপস্টিপ দেওয়া ।
আমি কিছু সময় ওর দিকে কেবল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম । আস্তে আস্তে অনুভব করতে পারলাম আমার হার্টবিট আস্তে আস্তে বাড়ছে । আমি যতই ওর দিকে এগোতে লাগলাম হার্টবিট টা ততই বেড়ে চলল । কাছে এসে দাড়াতেই ও আমার চোখে চোখ রেখে হাসলো । মুখে কিছু না বললেও ওর চোখের ভাষা পড়তে আমার মোটেও কষ্ট হল না । ও যেন বলছে, কি জনাব, পছন্দ হয়েছে তো ?
পুরো মেলাতে আমি ওর সাথে সাথে ঘুরতে লাগলাম । বারবার নানান ছলে ওর দিকে তাকাচ্ছি ওকে দেখতে ভাল লাগছে । মেলাতে আসতে আমি বইয়ের দিকে নজর দিই বেশি । কিন্তু আজকে আমার বই কেনা হল না বললেই চলে । শামা ঘুরে ঘরে কথা বলছিলো । আমি সেবস শুনছিলাম ।
মেলা থেকে বের হয়ে টিএসসির মাথায় বসলাম কিছু সময় । এক সাথে চা খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে পার হয়ে রাত নেমে এল । শামা যখন বাসায় ফিরে যেতে চাইলো আমি ওকে বাসায় পৌছে দিতে চাইলাম । ও রাজি হয়েও গেল । পুরো রাস্তাটা যেন আমার স্বপ্নের ভ্রমন মনে হল । ওকে যখন ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসতে যাবো তখন শামা হঠাৎ আমার হাত ধরলো । তারপর বলল, তুমি এতো ভীতু কেন ?
আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম, ভীতু মানে ?
-মানে বুঝো না । পুরোটুকু সময়ে নানান ছলে আমার দিকে তাকাচ্ছিলে আবার লজ্জাও পাচ্ছিলে । কই একবারও তো বললে না যে আমাকে কেমন লাগছে ! যদি বলতে তোমাকে দেখতে ভাল লাগছে । একটু তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে তাহলে কি হত !আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । কেবল বুঝতে পারলাম যে বুকের ভেতরে একটা অজানা অনুভূতি হচ্ছে ।
শামা বলল, কালকে আবারও মেলাতে যাবো আমি । ঠিক আছে । তুমি কাল আমাকে প্রাণ ভরে দেখো । মনে থাকবে ?
আমি কেবল মাথা নাড়লাম ।
শামা হাসলো । তারপর বলল, আর খবরদার যদি অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকিয়েছো !
আমি জলদি জলদি বললাম, তাকাবো না ।
-গুড ! এখন সোজা বাসায় যাও । খবরদার মোড়ের ছেলে গুলোর সাথে মিশবা না একদম । মনে থাকবে !আমি বুঝতে অসুবিধা হল না যে আমার উপর খবরদারি করার মানুষ চলে এসেছে ।
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।