নীশুর রাগ করা

372 23 3
                                    

ছোট বেলা থেকেই নীশুর রাগ হলেই সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিত । অনেক মান অভিমান চলতো পরিবারের লোকজনের উপর ! কিন্তু কেউ ওকে খাওয়াতে পারতো না ! খিদে পেটে রাগটা আরও একটু একটু বাড়তে থাকতো ! কিন্তু আবীরের সাথে বিয়ে হওয়ার পরে নীশু এই কাজটা মোটেই করতে পারে না ! আবীরের সাথে ওর একটা অলিখিত চুক্তি হয়েছে । সংসারে ঝাগড়া বিবাদ হবে কিন্তু কেউ না খেয়ে থাকবে না ! রাগ হবে মানুষের সাথে কিন্তু খাবারের সাথে কেউ রাগ করবে না !

আজ পুরো বিকেলটা নীশু আবীরের সাথে রাগ করে কাটিয়েছে । অভিমান পর্ব এতোটাই বড় ছিল যে নীশু ঠিক করে নিয়েছে কিছুতেই সে আবীর কে এবার ছাড় দিবে না । প্রতিবার আবীর একটা করে ভুল করে আর কিভাবে কিভাবে যেন ঠিকই ওকে পটিয়ে ফেলে ! কিন্তু এবার আর না ! ওর সাথে আর কোন কথা নয় ! পুরো বিকেল টা ওর জন্য অপেক্ষা করেছে । কথা ছিল ওকে নিয়ে বেড়াতে যাবে কিন্তু হঠাৎ ফোন করে বলল যে কাজে আটকে গেছে আসতে পারবে না ! তারপর নীশুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন রেখে দিল !
পুরো বিকেল টা ওর নষ্ট গেল ! আবীরের উপর এমন রাগ হল ! ঠিক করে নিল ওর সাথে আর কথা নয় ! কোন ভাবেই নয় !

রাতে বাসায় এসে আবীর এমন একটা ভাব করলো যেন কোন ঘটনায় ঘটে নি ! এমন কথা দিয়ে না আসাটা খুব স্বাভাবিক একটা কাজ ! এইটা দেখে নীশুর রাগটা আরও বেড়ে গেল ! সে মোটামুটি ঠিক করেই ফেলল এই বদ ছেলের সাথে আর থাকবে না ! যদি হাত জোর করে ক্ষমা না চায় তাহলে কাল সকালবেলা বাবার বাসায় চলে যাবে ! আর আসবে না !
বদ ছেলে কোথাকার !

রাতের খাবারের সময় হলে আবীর খুব স্বাভাবিক ভাবেই খাবার টেবিলে এল ! নীশুর একবার মনে হল সে খেতে যাবে না ! একবার পেট ভরে গেলে তখন আর রাগ ধরে রাখা যাবে না ! কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল কেন ধরে রাখা যাবে না ! আর আবীরের উপর রাগ করে না খেয়ে থাকার কোন মানে নেই !
আবীর যেমন ওকে কেয়ার করছে না দোষ করেও, তখন ও কেন খামোখা না খেয়ে থাকবে ! ওর সাথেই খেতে বসে গেল ! ও নিজেকে স্বভাবিক রাখার চেষ্টা করতে লাগলো ! আর মনে মনে বলল আবীর কে এবার সে কিছুতেই মাফ করবে না ! করবে না করবে না করবে না !
কিন্তু যখন খাওয়া শেষ করলো তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে খালি পেটে আবীরের উপর যতখানি রাগ ছিল এখন সেটা আর নেই । আগে যেখানে কোন ভাবেই ক্ষমা করবে না এমন একটা মনভাব ছিল এখন সেখানে হাত জোর করে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করে দিবে এমন মনভাব চলে এল ! তবুও নীশু নিজের রাগ টা কে ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করছে ! একবার মনে হল বেচারা নিশ্চয় বড় হ্যাপার মধ্যে ছিল ! বস নিশ্চয়ই আটকিয়ে দিয়েছিল ! ওর বা কি করার ছিল !
না ! তবুও ও সরি বলে নি ! ওর জন্য বিকেল টা নষ্ট হল !

নিজেকে আবারও বোঝাতে লাগলো ! ওর দোষ !
আচ্ছা ! কেবল সরি বলুক !
সরি না বললে কিছুতেই কাজ হবে না ! কথা বলবে না !

এমন যখন মনে ভেতরে দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছে তখন নীশু দেখলো আবীর ওর দিকে এগিয়ে আসছে । নীশু নিজের মুখ টা যথাযথ গম্ভীর রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু খুব একটা কাজ হচ্ছে না ! আবীর ওর সামনে একটা বড় ন্যাসলের চকলেট বার রাখলো ! তারপর একটু হেসে বলল
-যদি শান্তি চুক্তি গ্রহন কর তাহলে উপ হার হিসাবে এটা নিতে পারো ! আমি টিভির ঘরে অপেক্ষায় আছি !

নীশুকে দ্বিধার ভেতরে রেখে হাসতে হাসতে টিভির ঘরের দিকে হাটা দিল ! নীশুর এতো রাগ হল !
এই বদ ছেলেটা ওর দূর্বলতার কথা খুব ভাল করেই জানে ! আবীর খুব ভাল করেই জানে চকলেট ওর কি পরিমান প্রিয় !
কিন্তু তাই বলে একটা চকলেট বার দিয়েই মাফ পেয়ে যাবে ?
একবার সরিও বলবে না !
খাবো না চকলেট !
কোন শান্তি চুক্তি না !
ওর সাথে কোন কথা বলবো না !

কিন্তু লাভ হল না ! কেবল মনে চকলেট বার টা ওকে বারবার ডাকছে ! চিৎকার করে বলছে আবীরই তো আগে কথা বলেছে ! এবার মত ওকে ক্ষমা করে দাও ! আর আমাকে গ্রহন কর ! বেচারা তো আর ইচ্ছে করে দেরি করে আসে নি ! ওর বদ বস টাই সব নষ্টের মূলে !

শেষে আর থাকতে না পেরে চকলেট হাতে নিয়ে টিভির ঘরের দিকে হাটা দিল ! ওখানে গিয়ে দেখে আবীর যথরীতি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে ! এই ছেলেটার সাথে একটু রাগ অভিমান করেও শান্তি নেই ! ঠিক ঠিক ও পটিয়ে ফেলে কেমন করে যেন !
বদ ছেলে কোথাকার !

পরমানু গল্প গুচ্ছWhere stories live. Discover now