ক্লাসের অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় ১০টা বেজে গেল । আমাদের ধারণা ছিল রাত আটটার ভেতরেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে । কিন্তু যখন আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া শেষ হল তখন ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় ১০টা বেজে গেছে । আমরা ছেলেরা মেয়েদের পৌছে দেওয়ার দায়িত্ব নিলাম । একে একে সবার চলে যেতে যেতে আমরা কয়েকজন রয়ে গেলাম । তার ভেতর রিয়া তখনও রয়ে গেছে ।
ছাব্বির আমার দিকে তাকিয়ে বলল, অপু তুই রিয়াকে পৌছে দে ! ওর সাথে গাড়ি নেই । আমরা এদিকে যাচ্ছি ।
রিয়ার সাথে গাড়ি থাকবে বিধায় আমি ভাবি নি ওকে পৌছে দিতে হবে আলাদা ভাবে । গাড়ি নেই শুনে একটু অবাক হলাম ! তবে মনের ভেতরে একটা সুক্ষ আনন্দবোধ জেগে উঠলো ।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার পর আমি আর রিয়া রাস্তায় দাড়িয়ে আছি । আমাদের যেতে হবে ধানমণ্ডি । আমার বাসা মোহাম্মাদপুর । রিয়াকে নামিয়ে দিয়ে আমি আমার বাসার দিকে যাবো । আমি মোবাইল বের কর উবার ডাকতে যাবো এমন সময় রিয়া বলল, রিক্সা নাও । উবারে যাবো না !
আমি কোন কথা না বলে রিক্সা ঠিক করলাম । রিক্সাওয়ালা রিয়ার বাসার ঠিকানা বলতেই চোখ চলে গেল রিয়ার দিকে । তাকিয়ে দেখি ওর চোখে একটু কৌতুক পূর্ন হাসি । আমি ওর বাসার ঠিকানা জানি এটা দেখেই ও হাসছে । মনে মনে একটু বিব্রত হলাম । বোকার মত একটা কাজ হল ।
রিক্সা চলতে শুরু করলো । আমি চুপচাপ রিয়ার পাশে বসে আছি । কেমন যেন অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে । বইতে পড়েছি বিপরীত লিঙ্গের কারো স্পষ্ট মানুষকে অন্য রকম আকটা আনন্দ দেয় । আর মানুষটা যদি প্রিয় কেউ হয় তাহলে তো কথাই নেই । আচ্ছা রিয়ার বেলাতেও কি এমন হচ্ছে ?
কিন্তু আমি তো ওর প্রিয় মানুষ নই । আমি ওর জন্য কেবলই সাধারণ একজন ক্লাসমেট । বন্ধুও কি বলা ?
মনে হয় না !
হঠাৎ রিয়া বলল, এখনও রাগ করে আছো আমার উপর?
আমি চমকে উঠলাম । ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, রাগ? কই না তো?
-কথা বলছো না যে?
-ও আসলে আমি একটু কম কথা বলি ! জানোই তো !
-নিতুর সাথে তো খুব হেসে হেসে কথা বলছিলে সেদিন?
রিয়ার এই কথাটা আামকে বেশ অবাক করলো । আমি ওর দিকে এবার অর্থপূর্ন চোখে তাকালাম ।
রিয়া এবার আমার হাতটা ধরলো । তবে আলতো করে না । আঙ্গুলের ভেতরে আঙ্গুল দিয়ে ধরলো । আমি অনুভব করলো আমার বুকের স্পন্দন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে হঠাৎ করেই । রিয়া বলল, আমি জানি, তুমি সেদিন স্টোরীটা দেখে কষ্ট পেয়েছো !
আমি কোন কথা বললাম না । ঠিকই জানি ও কোন স্টোরির কথা বলছে । সপ্তাহ খানেক আগে রিয়া ওর স্কুল বন্ধুদের নিয়ে গিয়েছিলো ফ্যান্টাসী কিংডেম । সেখানে ওরা সবাই মিলে গোসল করছিলো । সেই নিয়ে বেশ কয়েকটা ভিডিও ছিল । এর ভেতরে একটা ভিডিওতে আমি দেখছিলাম রিয়াকে কোলে নিয়ে ওর একজন স্কুল ফ্রেন্ড পানিতে ছুড়ে দিল । হাসাহাসি চলছিলো ।
রিয়া বলল, রুপম আমার খুব ভাল বন্ধু । সেই ছোট বেলা থেকে । পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। একই সাথে খেলাধুলা করতাম । স্কুল কলেজও এক । বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে ও আলাদা হয়েছে । ও কেবলই বন্ধু । ওকে কোন দিন আমি বন্ধুর বেশি কিছু ভাবি নি । কিন্তু তবুও আমি জানি ঐ ভিডিও দেখে তোমার খারাপ লেগেছে । আমি চেষ্টা করবো এরপর থেকে সাবধান থাকার । এমন কিছু না করার যাতে তোমার কষ্ট লাগে !
আমি সত্যি সত্যি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি রিয়ার দিকে । মেয়েটা এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমি ওর প্রেমিক । আমাদের ভেতরে কিছু চলছে । রিয়া বলল, সেই সাথে তোমারও এমন আচরন কিছু করা উচিৎ না । তাই না ?
-আমি আবার কী করলাম ?
-বাহ, ঐ নীতুর সাথে সারাদিন হিহিহহাহা কি এতো ! এবার থেকে এতো হিহিহাহা বন্ধ । যখনই হিহিহাহা দেখি রাগে আামর শরীর জ্বলে যায় !
আমি সত্যি সত্যি কেবল অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি বিয়ার দিকে । এমন কিছু যে রিয়া বলতে পারে সেটা আমি ভাবিও নি কোনদিন । আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তার আগেই দেখি রিক্সা চলে এসেছে রিয়াদের বাসার সামনে । রিক্সা থেকে রিয়া নেমে পড়লো । তারপর নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা পানির বোতল আর একটা চকলেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিল । বলল, এটা খেতে খেতে বাসায় যাও । নয়তো তোমার বুকের ধুকধুকানি বন্ধ হবে না ।
রিয়ার কথা শুনে আমি নিজের বুকে হাত দিলাম । তখনও সেটা লাগিয়েই চলেছে । রিয়া হেসে ফেলল । তারপর বলল, এখান থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে !
আমি লজ্জা পেলাম এবার । রিয়া আবারও বলল, আজকে রাতে ঘুম আসবে না জানি । রাতে ফোন দিবো ।
রিক্সা চলতে শুরু কলো । আমি কয়েকবার ফিরে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি রিয়া তখনও গেটের কাছেই দাড়িয়ে রয়েছে !
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।