সাদির বুকের ভেতরটা জোড়ে জোড়ে লাফাচ্ছে। পুরানো কবরের বেদির পাশে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে। একটু দুরেই কবর স্থানের বুড়ো গার্ডের গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। বুড়ো বিড়বিড় করেই চলেছে। আইজ তোগো পাইয়া নেই। ঠ্যাঙ্গ যদি না ভাঙ্গি! সাদি বারবার দোয়া করলো যেন বুড়ো এদিকে না আসে। যদি ধরা পরে যায় তাহলে বুড়ো নিশ্চিত বাসায় নালিশ করবে। আর সাদির বাসায় যদি জানে এই রাতের বেলা ও রিয়াদের বাসায় না গিয়ে এই কবর স্থানে এসেছে আম চুরি করতে তাহলে ওর খবরই আছে।
ওদের কলেজ যাওয়ার পথেই এই বিশাল কবরস্থানটা পড়ে। যদিও রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে। গাছ গাছালিতে ভর্তি। বিভিন্ন ধরনের ফল গাছে ভর্তি। তবে মানুষ কেন জানি এই কবরস্থানকে এড়িয়ে চলে। এমন কি এলাকার ডান পিটে ছেলে গুলোও এই ফলের ধারে কাছে আসে না। এক পাহারাদার আছে। মানুষজনকে ঢুকতে দেয় না। দেখলেই তেড়ে আসে। মানুষ জনও খুব একটা ঘাটায় না।
তবে রিয়াদ আর সাদিরর এসবে ভয় নেই। যাওয়ার পথে আম গুলো দেখে লোভই লাগছিল। কেউ খায় না গাছেই নষ্ট হয়। তাই ওরা ঠিক করলো রাতে এসে চুরি করবে। রিয়াদ প্রথমে একটু নাহুনাহু করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। দুজন দুজনের বাসায় বলে যে ওরা একে অন্যের বাসায় থাকবে। পড়াশুনা করবে। তারপর চলে আসে এই কবরস্থানে। রিয়াদই গাছে উঠে আম পাড়তে শুরু করে।
সব ঠিকই চলছিল এমন সময় বুড়ো কেয়ারটেকার এসে হাজির। দুজন দুদিকে দৌড় দেয়। মুখ না দেখতে পারলে বুড়ো কারও নামে নালিশ করতে পারবে না। তারপর থেকেই সাদি এই কবরের বেদির পেছনে লুকিয়ে আছে।
আস্তে আস্তে বুড়োর পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে গেল দূরে। সাদি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ধরা পরলে আর রক্ষা ছিল না।
এখন বের হতে হবে। কিন্তু তার আগে রিয়াদকে খুজে বের করতে হবে। ওকে একা রেখে যাওয়া যাবে না। যেকোন একজন ধরা পরলে দুজনের কপালেই দুঃখ আছে। বেদি থেকে বের হতেই সাদি একটা বড় রকমের ধাক্কা খেল। ওর থেকে সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদের আলোতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সাদির মনে অন্য আর কিছু এলোই না। কেবল অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো। একবার মনেও হল না মেয়েটা এই রাতের বেলা এখানে কি করে এল বা এখানে কি করছে।
মেয়েটি বলল
-সাদি!
সাদি এবার একটু অবাক হল। মেয়েটাকে সে চেনে না। কিন্তু মেয়েটা তার নাম জানে।
-সাদি রিয়াদ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
সাদি স্বাভাবিক কন্ঠে বলল
-কোন দিকে?
মেয়েটা হাত তুলে দেখালো। সাদি আরও একটু অবাক হল এবার। মেয়েটা রিয়াদকেও চিনে। সাদি বলল
-তুমি আমাদের কিভাবে চিনো?
মেয়েটা বলল
-আমি সবাইকে চিনি। যাই হোক জলদি যাও। রিয়াদের কাছে খুব বেশি সময় নেই।
-সময় নেই মানে?
-মানে হচ্ছে তোমার বন্ধু রিয়াদ একটু আগে মারা গেছে। দৌড়ানোর সময় একটা গর্তে পা উল্টে পড়ে যায় ও। মাথার এমন জায়গাতে আঘাত লাগে যে সাথে সাথে মারা যায়।
সাদি থেমে গেল। বিশ্ময়ে ওর মুখটা হা হয়ে গেছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছো?
-আমি ইয়ার্কি মারি না। জলদি যাও। তুমি না গেলে আমি রিয়াদকে নিয়ে যেতে পারছি না।
-তুমি কি বলছো এসব? এই বলছো রিয়াদ মারা গেছে আবার এই বকছো রিয়াদকে নিয়ে যাবা। মানে কি!মেয়েটা যেন একটু হাসলো। তারপর বলল
-তোমার মনে এই প্রশ্নটা আসে নি যে আমার মত একটা মেয়ে এই রাতের বেলা এখানে কি করছে?
আরে তাইতো! সাদি বলল
-তুমি কে?
মেয়েটা বলল
-যেখানেই মৃত্যু সেখানেই আমি গিয়ে হাজির হই। এখন তুমি একটু জলদি কর। তুমি গিয়ে তোমার বন্ধুকে বিদায় বল।সাদি দ্রুত দৌড়াতে লাগলো। রিয়াদের দেহটা পেতে দেরি হল না। একটা কবরের বেদির সাথে ওর মাথাটা এমন ভাবে পড়ে আছে যে দেখেই মনে হচ্ছে রিয়াদ আর বেঁচে নেই। সাদি আর কিছু ভাবতে পারলো না। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
হাটু গেড়ে কাঁদতে লাগলো। এমন সময় পেছনে আবারও আওয়াজ পাওয়া গেল।
সেই মেয়েটি।
সাদি বলল
-না তুমি ওকে নিয়ে যেতে পারবে না। কোন ভাবেই না।
সাদি রিয়াদের শরীরকে আড়াল করতে চাইলো মেয়েটার কাছ থেকে। মেয়েটি বলল
-আড়াল করে লাভ নেই সাদি। তোমার বন্ধু আগেই মারা গেছে। আমি কেবল ওর আত্মাটা নিয়ে যেতে এসেছি। আমার একজন বাহক মাত্র। নিজের বন্ধুকে শেষ বারের মত বিদায় বলে নাও।
-না। প্লিজ রিয়াদকে নিয়ে যেও না।সাদি এবার চিৎকার করে কাঁদতে শুরু কাঁদতে শুরু করলো।
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।