করিডোরের শেষ মাথায় একটা বড় আয়না । শোবার থেকে বের হয়ে ফ্লাভিয়া সোজা সেই আয়নাটার দিকে এগিয়ে গেল । আয়নাতে নিজেকে পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে । শাড়ির কুচিটা ঠিক আছে কি না শেষ বারের মত দেখে নিল সে । মুখের মেকাপ সহ কপালের টিপটা ঠিকঠাক মত স্থানে আছে কি না সেটাই দেখে নিচ্ছে শেষ বারের মত । যদিও নিজের ঘর থেকে এসব দেখেই সে বের হয়েছে । তারপরও শেষবারের মত আরেকবার দেখে নিলো আয়নাতে নিজেকে । ব্যাস । সব ঠিক আছে । এখন যাওয়া যায় ফাংশনে ।
আয়নাটাকে পেছনে রেখে ফ্লাভিয়া আবার পেছনে ঘুরে হাট দিল । দরজার কাছে আসতে আসতে মনের ভেতরে হঠাৎ করেই একটা অস্বস্তি দেখা দিল ওর মনে । মনে হল কিছু যেন একটা ঠিক নেই । কিন্তু কি ঠিক সেই সেটা ঠিক ধরতে পারলো না । দরজাটা খোলার আগে আবার ঘরে দাড়ালো । আয়নার দিকে চোখ পড়তেই জমে গেল সে একেবারে । কোন ব্যাপারটা অস্বস্থি লাগছিলো সেটা ধরতে পারলো পরিস্কার ।
ফ্লাভিয়া আয়নাতে নিজেকে দেখতে পেল । সেই সবুজ রংয়ের শাড়ি পরা । কিন্তু ভয়ের কারণটা হচ্ছে আয়নার ফ্লাভিয়া ঠিক ওর দিকে তাকিয়ে নেই । দাড়িয়ে আছে ওর দিকে পেছন মুখ করে !
এটা কিভাবে সম্ভব ।
আয়নার দিকে কেউ তাকালে আয়নার প্রতিবিম্ব ঠিকই তার দিকে তাকাবে । এটা চিরন্তন সত্য একটা ব্যাপার কিন্তু এখানে এমনটা ঘটছে না । ফ্লাভিয়া ভয়ে কাঠ হয়ে একেবারে আয়নার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । নড়তে পারছে না একদম । ওর সাথে কি হচ্ছে এসব ! এমন কি সম্ভব?
ঠিক তখনই ফ্লাভিয়া দেখতে পেল আয়নার ভেতরের ফ্লাভিয়া আস্তে আস্তে ওর দিকে ঘুরে তাকালো । সরাসরি তাকালো ওর চোখের দিকে । শান্ত আর কালো চোখে সে একভাবে তাকিয়ে রইলো ফ্লাভিয়ার দিকে । ফ্লাভিয়া যেন নড়তে ভুলে গেছে এমন কি নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গেছে । এক পাও নড়ছে না সে । নড়তে পারছে না ।
আয়নার ভেতরের ফ্লাভিয়ার মুখে একটু যেন হাসি দেখা দিলো । ওর দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসছে সে । তারপর নিজের ডান হাতটা সামনে নিয়ে এল । ফ্লাভিয়া দেখতে পেল সেই হাতে একটা চকচকে কিচেন নাইফ । নাইফটা খুব ভাল করে চিনতে পারলো । নিল রংয়ের হাতল । এটা ওর নিজের কিচেনের ছুরি । মাংস কাটারর ছুরি । আয়নার ভেতরের ফ্লাভিয়া ছুরিটা সোজা নিজের গলার কাছে নিয়ে এল । তারপর ওর চোখে চোখ রেখেই সে ছুরিটা দিয়ে নিজের গলায় একটা পোঁচ মেরে দিল । ফ্লাভিয়া তাকিয়ে দেখলো আয়নার ভেতরের ফ্লাভিয়ার গলার ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে । আস্তে আস্তে পুরো ফ্লোর যেন ভেসে গেল রক্তে । তবুও আয়নার ভেতরের ফ্লাভিয়া ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে একভাবে । ফ্লাভিয়া আর দৃশ্যটা সহ্য করতে পারলো না । অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বাড়িঘর একেবারে অন্ধকার হয়ে আছে । সাথে সাথেই মনে পড়ে গেল সব। কোন মতে উঠে দাড়ালো । দেওয়াল হাতড়ে সে আলো জ্বালিয়ে দিল । তারপর সাথে সাথে চোখ গেল সেই আয়নার দিকে । নাহ । যা দেখবে ভেবেছিলো তেমন কিছু দেখতে পেল না । সব কিছু স্বাভাবিকই দেখাচ্ছে । আয়নাতে ওকেই দেখাচ্ছে ।
ফোনটা খুজে নিল । নীলাকে ফোন দেওয়া লাগবে । পার্টিতে যাওয়া হল না । ও নিশ্চয়ই রাগ করে আছে । ফোনটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে গেল । মোট ৪৪টা মিস কল উঠে আছে । নীলা ওকে ৪৪টা মিস কল দিয়েছে । কিন্তু না । মিস কল গুলো নানান পরিচিত মানুষের । সব চেয়ে বেশি মিস করল নাদিমের । ওর ঢাকার বাইরে রয়েছে । নাদিমকেই ফোন দিল সবার আগে ।
-হ্যালো ! কি হয়েছে ?
-তুমি ঠিক আছো?
-হ্যা ঠিক আছি । কি হয়েছে ?
-তুমি কিছু জানো না ?
-না তো ?
-নীলার বাসায় যাওয়া নি ।
-যাচ্ছিলাম কিন্তু শরীরটা হঠাৎ কেমন যেন করলো । তাই শুয়ে পড়লাম ।
-থ্যাংক গড যাও নি।
-কি হয়েছে বলবা তো ?
ওপাশ থেকে নাদিম কিছু সময় চুপ করলো । তারপর বলল, নীলাদের বাসায় এক সিরিয়াল কিলার ঢুকেছিলো । পার্টিতে ঢুকে যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই কুপিয়েছে । বিশেষ করে মেয়েদের গলায় ছুরি দিয়ে পোঁচ দিয়ে । নীলা সম্ভবত মারা গেছে । আরও সাত আট জনের অবস্থা খারাপ অনেক ।
ফ্লাভিয়া আর যেন শুনতে পেল না । ওর আবার আয়নাতে নিজের সেই প্রতিবিম্বর কথা মনে পড়ে গেল । আজকে যদি ওটা না দেখতো
তাহলে তো ঠিকই পার্টিতে গিয়ে হাজির হত । এবং হয়তো ঠিক একই ভাবে গলায় পোঁচ খেত । নিজের ভবিষ্যৎই দেখিয়েছিল সে !
(থিম ফ্রম ওয়াটপ্যাড)
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।