পরমানু গল্প গুচ্ছ

দুষ্টুমি

-এই ! দেখছো না আকাশে কিভাবে মেঘ জমেছে ! বাসায় যাবো কিভাবে ?
বৃষ্টি শুরু হলে নিহি বাসায় যেতে পারবে না । চিন্তার বিষয় অথচ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হল না যে ও এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত । বরং ওকে একটু খুশি খুশি মনে হল ।
আমার বিছানার সাথে বড় দুটো জানালা আছে । একটা জানালার কাছে বালিশ রেখে আমি কাত হয়ে শুয়ে আছি । দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম । নিহি খাটের শেষ মাথায় আরেকটা জানালার গায়ে হেলান দিয়ে বসেছে । মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে মেঘলা আকাশটাকে দেখছে ।
আমি বললাম
-বৃষ্টি শুরু হলে আর কি ! থেকে যাবা ।
-ইস ! আমার বুঝি আর কাজ নাই ? বাসায় কি বলবো শুনি ?
-বলবা যে আমাদের বাসায় ছিলে !
-তা জানাব, আপনি আমার কি হন শুনি ?
-কি হই ? আমি কি হই ? দাড়াও তোমাকে বোঝাচ্ছি আমি কি হই ?
-এই খবরদার বলছি । খবরদার । আন্টি চলে আসবে কিন্তু ! এই...
আমি উঠতে না উঠতেই দেখি মা দরজা দিয়ে ঢুকছে । হাতে দুইটা বাটি । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-নে এই দই টুকু খেয়ে নে । নাও মা তুমিও নাও ।
নিহি বলল
-আন্টি অনেক খেয়েছি । আর জায়গা নেই কিচ্ছু ।
-হয়েছে নাও । এই টুকু খেলে কিছু হবে না । খাওয়ার পরে মিষ্টি কিছু খেতে হয় ।
মা বাটি দুটো নিহির হাতে দিয়ে চলে গেল । মায়ের আচরন দেখে একটু অবাকই হচ্ছি । যেই মা আমার মেয়ে বন্ধুদের কথা শুনতেই পারতো না সেই মা নিহির সাথে কত চমত্‍কার কথা বলছে । আর নিহিটাও হয়েছে । এভাবে আমাদের বাসায় আসবে একবার বলবে তো !
নামাজ পড়ে এসে একটু শুয়েছি অমনি বাড়িতে এসে হাজির । আসার পর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম বন্ধু বলে কিন্তু মা ঠিকই বুঝতে পেরেছে । তারপর থেকেই নিহি মায়ের সাথে সেই ঘুটুর শুরু করেছে । কি এতো কথা বলছে কে জানে । দুপুরে খাওয়ার দেখলাম মায়ের মুখ বেশ হাসি হাসি । মাকে কিভাবে পটালো কে জানে । খাওয়া দাওয়ার পরে নিহি আমার ঘরে আসার সময় পেল ।

নিহির হাত থেকে বাটি নিতে নিতে বললাম
-তুমি মাকে পটালে কিভাবে শুনি ?
নিহি একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
-কেন বলবো ? আস্তে আস্তে টের পাবা ।
-মানে কি ?
-কোন মানে নেই । চুপচাপ খাও । অন্য কিছু পাবা না ।
-অন্য কিছু পাবো না মানে কি ?
-আহা কচি খোকা । কিছু বোঝে না । পাবা না মানে পাবা না ।
-আমি তো কিছু আশাই করি নি ।
-ইস ! আমার ভালু পুলারে । তোমাকে তো আমি চিনি । তোমার চোখ দেখলেই বুঝতে পারি মনে কি চলতেছে ।
-কি চলতেছে শুনি ?
নিহি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি জানো না কি চলতেছে । বদ কোথাকার !

দেখছো এই মেয়ের কাজ কারবার । আমি কিছু চিন্তা করতে চাইবো না কিন্তু আমাকে জোর করে চিন্তা করাবে । দাড়াও আজকে তোমাকে মজা দেখাচ্ছি ।

আমাকে বাটি টা বিছানার উপরে রাখতে দেখেই নিহি বলে উঠলো
-এই খবরদার বলতেছি । কাছে আসবা না কিন্তু । আমি কিন্তু আন্টিকে ডাক দিবো । এই.. এই...