কফির কাপে সবে মাত্র চুমুক দিয়েছি তখনই ফোনটা বেজে উঠলো । একটু অবাক হতে হল । সকাল বেলা স্বাধারনত কেউ আমাকে ফোন দেয় না । পরিচিত সবাইকে খুব ভাল করে মানা করে দেওয়া আছে যে সকাল বেলা ফোন না দিতে যদি না খুব বেশি দরকার পরে ।
আমি ফোন হাতে নিতেই আরেক দফা অবাক হলাম ।
আভার ফোন !
আভা এই সময়ে অফিসে যায় । সকাল থেকেই তার ব্যস্ততা শুরু । রবিবার ছাড়া এই সময়ে সে কোন ভাবেই ফ্রি থাকে না ।
আমাদের প্রতিদিন রাতে কথা হয় । রাতে ছাড়া মাঝে মধ্যে বিকেল কথা হয় । কিন্তু সকাল বেলা কথা হয় না বললেই চলে ।
আজকে হঠাৎ এই সময়ে ফোন ?
হঠাৎই মনে হল ঐ ব্যাপারে ফোন দেয় নি তো ?
তারপর চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । সম্ভব না !
ফোন রিসিভ করলাম !
-হ্যালো !
-হ্যালো ।
-অফিস যাও নি ।
-হ্যা অফিসেই !
-কোন দরকার ? কাজের সময়ে তো তুমি স্বাধারনত ফোন দাও না !
আভা কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল,
-তুমি ঠিক আছো ?
-হ্যা ! ঠিক আছি ! কেন ?
-না সত্যি করে বল ? কিছু হয় নি ?
আমার বুকের ভেতরটা খানিকটা কেঁপে উঠলো । তবুও নিজেকে খানিকটা শান্তি করে বললাম
-নাহ ! কি হবে !
আমি জানি না আমার কন্ঠে কি ছিল আভা এবার আরো জোর দিয়ে বলল, সত্যি করে বল । আমার মন বলছে তোমার কিছু হয়েছে ? বল প্লিজ ! প্লিজ ! আমার শান্তি লাগছে না !
আমি একটা বড় করে দম নিলাম । তারপর পায়ের দিকে তাকালাম । একটু আগে ওয়াশরুম থেকে বের হতে গিয়ে দরজার সাথে আমার পায়ের আঙ্গুলের ধাক্কা লেগেছে । এটা আগেও হয়েছে আমার সাথে । কিন্তু এবার একটু সিরিয়াস । পায়ের নখ খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছে । রক্ত পরছিলো । ব্যান্ড এইড দিয়ে বেঁধে রেখেছি ।
আমি বললাম, দরজার সাথে ব্যাথা পেয়েছি !
তারপর বললাম কি হয়েছে ! কথা শোনার পর আভা বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমার মনে হল ও যেন কাঁদছে । আমাকে তারপর রাগত কন্ঠে বলল, এতো স্টুপিড কেন তুমি ?
-আরে বাবা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না ?
-না পারে না । এটা প্রথমবার ? প্রথমবার ? প্রথমবার হলে বুঝলাম যে দুর্ঘটনা । কিন্তু না ! জনাবের এসবের কোন খেয়াল নেই । উনি চলেন নিজের মত । চলেন ! জাহান্নামে যান । মরে যান আমার কি !
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আভা ফোন কেটে দিল । আমি চুপ করে বসে রইলাম । কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । ও যে রেগে গেছে বুঝতে পারছি । এখন ফোন দিলে আরও রেগে যাবে !
আধা ঘন্টা পড়ে আবারও ফোন বেজে উঠলো । আমি রিসিভ করতেই আভা বলল, দরজা খোল !
-মানে ?
কোন উত্তর এল না । কারন ফোন কেটে গিয়েছে । একটু খোড়াতে খোড়াতে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম আভা দাড়িয়ে আছে । মুখটা এখনও থমথমে । আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও হাসলো না ।
রান্না ঘরে গিয়ে নিজে গরম পানি করলো । তারপর আমাকে বিছানায় বসিয়ে যত্ন সহকারে আবার পায়ের ব্যান্ড এইচ খুলল । আমি কেবল ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো যেন আমার এই ক্ষত দেখে ও কষ্ট পাচ্ছে । আমি মাঝে মাঝে সত্যিই অবাক হয়ে যাই নিজের এই ভাগ্য দেখে ! এতো ভালবাসা আমার জন্য লেখা ছিল !
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।