কল্প দৃশ্য ৩.৩

401 19 0
                                    

কফির কাপে সবে মাত্র চুমুক দিয়েছি তখনই ফোনটা বেজে উঠলো । একটু অবাক হতে হল । সকাল বেলা স্বাধারনত কেউ আমাকে ফোন দেয় না । পরিচিত সবাইকে খুব ভাল করে মানা করে দেওয়া আছে যে সকাল বেলা ফোন না দিতে যদি না খুব বেশি দরকার পরে ।

আমি ফোন হাতে নিতেই আরেক দফা অবাক হলাম ।

আভার ফোন !

আভা এই সময়ে অফিসে যায় । সকাল থেকেই তার ব্যস্ততা শুরু । রবিবার ছাড়া এই সময়ে সে কোন ভাবেই ফ্রি থাকে না ।

আমাদের প্রতিদিন রাতে কথা হয় । রাতে ছাড়া মাঝে মধ্যে বিকেল কথা হয় । কিন্তু সকাল বেলা কথা হয় না বললেই চলে ।

আজকে হঠাৎ এই সময়ে ফোন ?

হঠাৎই মনে হল ঐ ব্যাপারে ফোন দেয় নি তো ?

তারপর চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । সম্ভব না !

ফোন রিসিভ করলাম !

-হ্যালো !

-হ্যালো ।

-অফিস যাও নি ।

-হ্যা অফিসেই !

-কোন দরকার ? কাজের সময়ে তো তুমি স্বাধারনত ফোন দাও না !

আভা কিছু সময় চুপ করে রইলো । তারপর বলল,

-তুমি ঠিক আছো ?

-হ্যা ! ঠিক আছি ! কেন ?

-না সত্যি করে বল ? কিছু হয় নি ?

আমার বুকের ভেতরটা খানিকটা কেঁপে উঠলো । তবুও নিজেকে খানিকটা শান্তি করে বললাম

-নাহ ! কি হবে !

আমি জানি না আমার কন্ঠে কি ছিল আভা এবার আরো জোর দিয়ে বলল, সত্যি করে বল । আমার মন বলছে তোমার কিছু হয়েছে ? বল প্লিজ ! প্লিজ ! আমার শান্তি লাগছে না !

আমি একটা বড় করে দম নিলাম । তারপর পায়ের দিকে তাকালাম । একটু আগে ওয়াশরুম থেকে বের হতে গিয়ে দরজার সাথে আমার পায়ের আঙ্গুলের ধাক্কা লেগেছে । এটা আগেও হয়েছে আমার সাথে । কিন্তু এবার একটু সিরিয়াস । পায়ের নখ খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছে । রক্ত পরছিলো । ব্যান্ড এইড দিয়ে বেঁধে রেখেছি ।

আমি বললাম, দরজার সাথে ব্যাথা পেয়েছি !

তারপর বললাম কি হয়েছে ! কথা শোনার পর আভা বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমার মনে হল ও যেন কাঁদছে । আমাকে তারপর রাগত কন্ঠে বলল, এতো স্টুপিড কেন তুমি ?

-আরে বাবা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে না ?

-না পারে না । এটা প্রথমবার ? প্রথমবার ? প্রথমবার হলে বুঝলাম যে দুর্ঘটনা । কিন্তু না ! জনাবের এসবের কোন খেয়াল নেই । উনি চলেন নিজের মত । চলেন ! জাহান্নামে যান । মরে যান আমার কি !

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আভা ফোন কেটে দিল । আমি চুপ করে বসে রইলাম । কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । ও যে রেগে গেছে বুঝতে পারছি । এখন ফোন দিলে আরও রেগে যাবে !

আধা ঘন্টা পড়ে আবারও ফোন বেজে উঠলো । আমি রিসিভ করতেই আভা বলল, দরজা খোল !

-মানে ?

কোন উত্তর এল না । কারন ফোন কেটে গিয়েছে । একটু খোড়াতে খোড়াতে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম আভা দাড়িয়ে আছে । মুখটা এখনও থমথমে । আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম কিন্তু ও হাসলো না ।

রান্না ঘরে গিয়ে নিজে গরম পানি করলো । তারপর আমাকে বিছানায় বসিয়ে যত্ন সহকারে আবার পায়ের ব্যান্ড এইচ খুলল । আমি কেবল ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে ছিলাম । ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো যেন আমার এই ক্ষত দেখে ও কষ্ট পাচ্ছে । আমি মাঝে মাঝে সত্যিই অবাক হয়ে যাই নিজের এই ভাগ্য দেখে ! এতো ভালবাসা আমার জন্য লেখা ছিল ! 

পরমানু গল্প গুচ্ছWhere stories live. Discover now