সন্ধ্যার সময়ে যখনই আযান দেয় তখনই সবার মাঝে একটা চাঞ্চল্য দেখা দেয় । আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন সন্ধ্যার আযান দেওয়া মানেই হচ্ছে যেখানে যা করছি সব ফেলে, ফিরে আসতে হবে বাসার দিকে । ঢাকাতে এসে এই নিয়মটা আর মানা হয় না । এখন এমনও সময় আছে যে আযান দিলেই বাইরে বের হই । তবে একটা ব্যাপার এখনও আগের মতই আছে । আযান দিলেই আগে যেমন দেখতাম আমাদের মা চাচিটা মাথায় শাড়ির আচল তুলে দিতো, আপুরা ওড়না চাপিয়ে দিতো এখনও এটা খুব চোখ পড়ে ।
নীতু আমার পাশেই বসে ছিল । আজকে আমার টিউশনী নেই । তাই ঠিক করেছিলাম বিকেল বেলাটা দুজন এক সাথে কিছু সময় কাটাবো । টিএসসির চায়ের দোকানের পাশে বসে চা খেতে খেতে ওর সাথে গল্প করছিলাম । ওর হাতে একটা বই সেটার দিকেই ওর চোখ । সেখান থেকে আমাকে কিছু পড়ে শোনাচ্ছে । আমার অবশ্য সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই । আমার চোখে ওর দিকে । কালো ফ্রেমের চশমাতে নীতুকে অদ্ভুত সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝে চশমাটা নাকের কাছে নেমে যায় । সেটা ওর বাম হাতের তর্জনি দিয়ে ঠেলে আবারও উঠিয়ে দেয় । আমার চোখ সেদিকে বারবার আটকে যায় । মাঝে মাঝে চশমার পাশ দিয়ে কয়েক গাছি চুল বেরিয়ে পড়ে । চুল গুলো বেশি কিছু সময় ওর নাড়াচাড়া করে । আমার খুব ইচ্ছে করে চুল গুলো আমি নিজে হাত দিয়ে কানের পাশে গুজে দেই । অবশ্য সেটাট অধিকার ও নিজেই আমাকে দিয়েছে । কিন্তু আমার সংকোচের কারণে করা হয় না । এতো গুলো মানুষের সামনে এই কাজটা করতে লজ্জা লাগবে আমার ।
আমি সেদিকেই তাকিয়ে ছিলাম তখনই সন্ধ্যার আযান দিল । নীতুর মাঝে একটু চাঞ্চল্য দেখতে পেলাম । দেখলাম বইটা এক পাশে সরিয়ে রেখে সে নিজের ওড়ণাটা ঠিক করে মাথার উপর তুলে দিল । মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা ব্যাপার । তারপর আবারও বই নিয়ে বসলো । আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নীতুর দিকে । নীতুর ওড়ণা ঠিক করে সেটা মাথার উপরে ঢেকে দেওয়ার দৃশ্যটা আমার চোখে লেগে থাকলো বেশ কিছুটা সময় । মনে হল যে জীবনের অন্যতম সুন্দর একটা দৃশ্য দেখলাম ।-আমি কি বললাম শুনেছো?নীতুর কথায় কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম । তাকিয়ে দেখি নীতু মাথায় ওড়ণা মুখটা এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হাত দিয়ে চশমাটা আবারও উপরে তুলে ধরলো সে । তারপর আবার বলল, কি ? কি ভাবছো?আমি হাসলাম । তারপর বলল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ।-মানে ? শুনো আমার কথা মন দিয়ে শুনছো না আর ধরা পড়ে বলছো আমাকে সুন্দর লাগছে । পাম দিচ্ছো ?আমি বলল, না পাম না । সত্যিই । তুমি যখন ওড়না মাথায় তুলে দিলে, আমি তোমার দিকে তাকিয়েছিলাম । মনে হল যেন জীবনে এর থেকে সুন্দর দৃশ্য আমি আর দেখি নি । সত্যিই দেখি নি ।
নীতু কি বলবে বুঝতে পারলো না । কারণ ও আমার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পেরেছে যে আমি মিথ্যা বলছি না । দেখলাম যে ওর চোখ কেমন গাঢ় হয়ে এল । অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিল সাথে সাথে । আমি আরও একটু ওর শরীর ঘেসে বসলাম । তারপর ওর হাতটা ধরে বললাম, আমি প্রতিটি সন্ধ্যায় আযানের সুর শুনে তুমি যখন মাথায় কাপড় তুলে দিবে সেই দৃশ্য দেখতে চাই ।
নীতু কেবল মাথা ঝাকালো । আমরা দুজনে চুপচাপ কিছু সময় বসে রইলাম । চারিদিকে গাড়ি রিক্সা চলছে পুরো দমে তবে আমাদের দুজনের কাছে মনে হল খুব নির্জন কোন স্থানে আমরা বসে রয়েছি । আমরা ছাড়া আর কেউ নেই এখানে । এখানে এভাবে দুজন অনন্ত কাল বসে থাকতেও প্রস্তুত !
أنت تقرأ
পরমানু গল্প গুচ্ছ
القصة القصيرةমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।