যেহেতু সেহেতু

509 38 8
                                    

গ্রামে বিচার বসেছে। সব গন্য মান্য ব্যক্তিরা বসে আছে। থানা থেকে ওসি সাহেব মিনহাজও এসেছে। তবে আসার আগে এসপি সাহেব ভাল করে বলে দিয়েছেন যেন সে কোন কথা না বলে। গ্রামের মাতব্বরেরা বেশ প্রভাবশালী। তারা সবাই মিলে যে বিচার করবে সেটাই যেন হয়। বিচারটা হচ্ছে চেয়ারম্যানের ছেলে গ্রামের এক মেয়েকে শারীরিক ভাবে হ্যারাজ করেছে। মেয়েটি রাতে বাসায় ফিরছিল এক বন্ধুর বাসা থেকে। বিচার কাজ শুরু হল।
চেয়ারম্যানের ছেলের নাম লাল্টু আর মেয়েটির নাম শিউলি।
মেম্বার হাসেম বলল শিউলীর গায়ে যদি লাল্টু হাতই দেত তাহলে দোষ তো শিউলিরও আছে। সে অতো রাতে বাড়ির বাইরে কি করছিল? আর শিউলি তো বোরকা পরে না। তার দোষ তো অবশ্যই আছে! রাতের বেলা বের হলে এসব হবেই। বোরকা না পরলে মানুষ গায়ে হাত দিবেই।

মিনহাজের মেজাজটা চরমে উঠে গেল কিন্ত এসপি স্যারের বলে দেওয়ার জন্য কিছুই বলতে পারলো না।

বিচার গিয়ে দাড়ালো লাল্টুর কোন দোষ নেই। শিউলি যদি রাতে না বের হলে এমন কিছুই হত না। তাই শিউলিকে দোষী বলা হল তবে প্রথমবার এমন কিছু হওয়ার কারনে তাকে শাস্তি দেওয়া হল না। কেবল ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল।

মিনহাজ খুবই অসন্তুষ্ট হয়ে বাসায় ফিরে গেল। বারবার মনে হত লাগলো কাজটা ঠিক হল না। অপরাধী পার পেয়ে গেল। তবে সে মনে মনে ঠিকও করে ফেলল তার কি করতে হবে।

এক সপ্তাহ পরে লাল্টু গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাসায় আসছিল। গ্রামের হাটবার ছিল। তার কাছে বেশ টাকা পয়সা ছিল। আড়তদারি করে এসেছে। বট গাছের কাছে আসতেই কিছু শক্ত সমর্থ লোক মুখে কাপড় দেওয়া, তাকে ঘিরে ধরলো। তারপর তার কাছ থেকে টাকার ব্যাগটা ছিনিয়ে নিল। যেই না লাল্টু বাঁধা দিতে গেল তখন ওরা সবাই মিলে লাল্টুকে সেই মাইর দিল। এমন মাইর যে লাল্টু সোজা হয়ে দাড়াতে পর্যন্ত পারছিলো না।
যথারীরি পরদিন পুলিশ হাজির হাসপাতালে। হাসপাতালে চেয়ারম্যান মেম্বার সবাই ছিল। মিনহাজ জানতে চাইলো কি হয়েছিল।
সব কিছু শোনার পর মিনহাজ বলল
-বাহ আপনি এতো গুলো টাকা নিয়ে রাতের বেলা একা একা যাবেন আর ডাকাতেরা আপনাকে ছেড়ে দিবে? একা একা যাওয়া মোটেই ঠিক হয় নি। যদি একা একা না যেতেন তাহলে আজকে ডাকাতেরা আপনাকে ধরতো না। দোষ তো আপনার!
চেয়ারম্যান অবাক হয়ে বলল
-কি বলছেন আপনি এসব? লাল্টুর দোষ নাই?
মিনহাজ বলল
-শিউলির যেমন রাতে বের হওয়াটা দোষের ছিল ঠিক তেমনি লাল্টুরও টাকা নিয়ে বের হওয়াটা দোষের। থিউরি তো আপনারাই শিখিয়েছেন। তাই না? গেলাম। এরপর থেকে আর রাতে বের হবেন না। তাহলে চোরেরা আর ধরবে না।

মেম্বার হাসেম বলল
-আর এই যে লাল্টুকে ওরা পেটালো! এটার?
মিনহাজ বলল
-ওদের কাজে আপনি বাঁধা দিবেন আর আপনাকে ওরা চুমা দিবে? ও যদি বাঁধা না দিতো তাহলে এমন মাইর খেতে হত না। শিউলি বেলাতে আপনিই তো এমন লজিক দিয়েছিলেন, নাকি? মনে নেই?

মিনহাজ মুচকি হাসতে হাসতে বের হয়ে এল রুম থেকে। পরদিন রাতের বেলা মেম্বার হাসেমকে ধরলো সেই ডাকাত দল রাতের বেলা। মেম্বারের কাছে তেমন কিছুই ছিল না নেওয়ার মত। এটাতে ডাকাত দল ক্ষেপে গিয়ে মনের সুখে হাসেম মেম্বার সেই পেটান পেটালো। লাল্টু তো সোজা হতে পারছিলো না, হাসেম মেম্বারকে যেভাবে ওরা ফেলে গেল সেভাবেই পরে রইলো। সকালে লোক জন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল ।

হাসপাতালে যখন চেয়ারম্যান বলল পুলিশ ডাকতে তখন হাসেম বলল
-দরকার নাই ডাক দেওয়ার। ওসি সাব কি বলবে জানা আছে। বলবে টাকা ছিল না এই জন্যই তো রেগে গিয়ে পিটিয়েছে। ওরা ডাকাতি করতে আসবে আর তোমার কাছে টাকা পাবে ওদের রাগ হবে না?
তারপর চেয়ারম্যানের দিকে ফিসফিস করে বলল
-আপনের নাম্বারও আইতাছে। ঐদিন শিউলির বিচারে যারা সায় দিছিলো, সবার খবর আছে।

সেই ডাকাত দল যে কারা আজও কেউ বের করতে পারে নি। এরপর আরো কয়েকবার তারা হামলা করেছে তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ এই ডাকাত দলের লোকজনকে ভয় পায় না। কারণ তারা জানে এই বিশেষ ডাকাত দলটা যাকে তাকে মাইর দেয় না। গ্রামের কিছু বিশেষ কুলাঙ্গার এবং তাদের সমর্থকদের ধোলার দেয়। তাই প্রতিবার হামলার পরেই তারা আনন্দ পায়।

পরমানু গল্প গুচ্ছWhere stories live. Discover now