এন্টিরেসিস্ট রিমন মিয়া

403 20 3
                                    

রিমন মনযোগ দিয়ে একটা প্রতিবাদী ফেসবুক পোস্ট লিখছে । তার লেখার বিষয় হচ্ছে রেসিজম এই পুরো পৃথিবীটাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকাতে এটা খুবই প্রকট ! সাদা আমেরিকান কালো আমেরিকানদের প্রতি যে অন্যায় করে আসছে সেটা সে মেনে নিতে পারছে না। তার মতে আমেরিকা হচ্ছে খুব রেসিস্ট একটা দেশ । এবং এই দেশ নিয়ে মানুষের এতো আদিখ্যেতা কেন সেটা সে বুঝতে পারে না । তার মতে সময় এখনই যে এই দেশের উপর থেকে পুরো বিশ্বের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ! কিভাবে একটা পুলিশ একজন হ্যান্ডকাফ পরা মানুষকে মেরে ফেলল । এই বর্বরতার শেষ কোথায় !

লেখাটা পোস্ট করার সাথে সাথে দেখতে পেল প্রায় গোটা চল্লিশেক লাইক চলে আসলো । মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে সে বসার ঘরের দিকে হাটা দিল । আজকে তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা বিষক একটা মিটিং বসেছে বসার ঘরে । একটু আগে তার ছোট বোন তাকে ডেকে গেছে ! মনটা তার একটু খুশি খুশি লাগছে !

বসার ঘরে তার বাবা টিভি দেখছিলো । সংবাদ । খবরে বলছে গতকাল রাতে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে কে নাকি মারা গেছে । রিমন বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, একদম ঠিক কাজ হয়েছে । এই ভাবেই মেরে ফেলা উচিৎ । এদের জন্যই তো দেশটার আজ এই অবস্থা !

রিমনের মা একটু দুরে বসে ছিল । ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, ঐসব বাদ দাও, আমার পাশে বস । মেয়ে পছন্দ কর । ঘটক এই ছবি গুলো দিয়ে গেছে ! সেই সাথে মেয়েদের সব বায়োডাটাও !

রিমন খানিকটা লাজুক হেসে বলল, মা তুমি যেটা পছন্দ করবে সেখানেই আমি বিয়ে করবো !

রিমনের মা খুশি হলেন । তারপর বললেন, তুই পছন্দ কর । আমি পরে দেখছি । তোর বিয়ে । তুই আগে দেখবি ।

রিমন বেশ কয়েকটা ছবি দেখতে শুরু করলো । একটা ছবি মায়ের হাতে দিল । মা সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । তারপর বললেন, নাহ । এই মেয়েটার গায়ের রং একটু ময়লা ! আমার নাতি নাতনি কালো হবে । এটা বাদ

ছবিটা হাতে নিয়ে রিমনের মনে হল তার মা একেবারে সত্যি কথা বলছে । মেয়েটার গায়ের রং আসলেই ময়লা একটু । বাদ এটা !

এরপর আরেকটা মেয়ে পছন্দ করলো । গোলগাল মেয়েটা দেখতে বেশ । মায়ের দিকে বাড়িয়ে দিল ছবিটা । তার মা কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, নাহ । এটা একটু মোটা । বিয়ের পরে আরো ফুলবে ! এটা বাদ !

রিমন আবারও মায়ের বুদ্ধিমত্তা দেখে মুগ্ধ হল । তার মা কত কিছুই না বুঝে ! মায়ের মতের সাথে সে একমত পেষণ করলো । এই মেয়েটার সাথে বিয়ে করলে দেখা যাবে বিয়ের পরে মেয়েটা একেবারে মোটা হয়ে যাচ্ছে । তখন সবার সামনে সে মুখ দেখাবে কি করে !

এরপর আরও একটা মেয়ে নির্বাচন করা হল । মেয়েটি দেখতে শুনতে বেশ ভাল । শরীরও হাকলা পাতলা । তবে বাধ সাধলো তার বোন রিমকি । রিমকি মেয়েটির প্রোফাইল দেখে বলল, না ভাইয়া এটা বাদ !

-কি? বাদ হবে কেন?

-এর বাড়ি হরিনাকুন্ড ! ঐ এলাকার মানুষ মোটেও ভাল হয় না, তুমি জানো না !

সবাই মাথা নাড়ালো । রিমকি ঠিকই বলেছে । ঐ এলাকার মানুষ ভাল হয় না । বাদ বাদ !

এর পরে যাকে নির্বাচন করা হল তাক সবারই পছন্দ হল খুব । মেয়েটি দেখতে শুনতে ভাল । গায়ের রং বেশ । হালকা পাতলা এবং সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মেয়ের আমেরিকান পাসপোর্ট আছে । সব ঠিক হয়ে গেল । এই মেয়েকেই সে বিয়ে করবে । তার মাও রাজি । বোনও রাজি । এমন সুপাত্রী হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না । আজই মেয়ের বাসায় যাবে ওরা বিকেলে । ঘটক কে জানিয়ে দেওয়া হল !

রিমন আবারও নিজের মোবাইল বের করলো । এক ঘন্টার প্রায় হাজার লাইক চলে এসেছে । সেই সাথে গোটা শয়েক কমেন্ট । সব আমেরিকা আর সাদা চামড়ার বিরুদ্ধে । বর্ণবাদের বিরুদ্ধে । রিমন খুশি হল খুব । যাক আজকে আরেকটু বর্ণবাদ বিরোধী পোস্ট লিখতে হবে । কি লেখা যায় ভাবতে লাগলো সে !

পশ্চিমা বিশ্বের লোকজন আর আমাদের দেশের লোকজনের ভেতরে পার্থক্য হচ্ছে তারা জানে যে তারা বর্ণবাদী, মেনেও নেয়, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ জানেই না যে তারা বর্ণবাদী ! তাদের বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় মানুষ রাস্তায় নামে আর আমাদের দেশে এটা লালন পালন করা হয় । 

পরমানু গল্প গুচ্ছDonde viven las historias. Descúbrelo ahora