দবির সাহেব বেশ বিরক্ত । রিক্সা করে বাসায় ফিরছিলেন । তবে আজকে একটা কাজ থাকায় পান্থপথে আসতে হয়েছিলো । সারাদিনের অফিস শেষে বেশ ক্লান্ত লাগছে তার । কিন্তু রাস্তায় কুকুর বিড়ালের জ্যাম লেগে আছে । কিছুতেই যেন ছাড়তে চাইছে না । এই জন্য তিনি সাধারনত এই রাস্তায় আসতে চান না । কিন্তু মাঝে মাঝে আসতে হয় ।এখন তার আর কিছুই ভাল লাগছে না । কেবল বাসায় গিয়ে একটু ঘুমাতে ইচ্ছে করছে ।
অনেক অপেক্ষার পর তার রিক্সা পান্থপথ মোড়ে এসে থামলো । একটু যেন শান্তি পেল । আরেকটা সিগনাল পার হলেই বাকি রাস্তাটা একটু সহজ হবে তার জন্য । আর জামে পড়তে হবে না খুব একটা । বাঁ দিকে তাকাতেই তিনি দেখতে পেলেন একটা বাইকের পেছনে একটা যুবক ছেলের সাথে একটা মেয়ে বসে আছে । বাইকের আসনে চশমা পরা ছেলে । তার পেছনে একটা মেয়ে । মেয়েটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না । দবির সাহেবের মেজাজটা মুহুর্তেই খারাপ হয়ে গেল । তিনি সব কিছু সহ্য করতে পারেন কিন্তু ছেলে-মেয়েদের এমন অবাধ ঘুরাঘুরি একদম সহ্য করতে পারেন না । ইচ্ছে হয় ধরে ধরে একেকটাকে থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করে । কিন্তু চাইলেই দিতে পারেন না । দেওয়া যায় না । তিনি মুখ বুঝে সহ্য করে নিলেন ।
ঠিক সেই সময়ে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন বাইকের পেছনের মেয়েটি আর কেউ নয়, তার নিজের মেয়ে সাদিয়া । তীব্র বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে । কিছুতেই যেন বিস্মাস হচ্ছে না । একটা অচেনা ছেলের সাথে বাইকে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এটা সে কোন ভাবেই সহ্য করতে পারবেন না । রিক্সা থেকে এক লাফেই নেমে গেলেন তিনি । তারপর সোজা গিয়ে হাজির হলেন বাইকের সামনে ।
বাবাকে দেখেই চমকে উঠলো সাদিয়া । বাবার এই ব্যাপারটা সম্পর্কে সে খুব ভাল করেই জানে । ছেলে মেয়েদের এমন অবাধ মেলামেশা তিনি মোটেই পছন্দ করেন না । আর তার নিজের মেয়ে কি না অন্য ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে ! সাদিয়া বাবাকে দেখেই বাইক থেকে নেমে গেল । তাকিয়ে রইলো বাবার দিকে । মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে গেল, বাবা ! তুমি এখানে ?
দবির সাহেব কি বলবেন খুজে পেলেন না । তার ইচ্ছে করলো এখনই সাদিয়াকে একটা চড় বসিয়ে দেন । কিন্তু তার আগেই সামনে বসা ছেলেটা বলল, ম্যাডাম ১২০ টাকা হয়েছে ।
সাদিয়া খানিকক্ষণ ফ্যাঁলফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল, হ্যা ১২০ ?
দবির সাহেব দেখলো বাইকে বসা ছেলেটা মোবাইল বের করে কি যেন টেপাটেপি করে মোবাইলটা সাদিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে ।সাদিয়া সেদিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । রাকিব কোন এপস বের করে নি । সেখানে মেসেজ অপশন ওপেন করা । পাঠাও এর একটা সার্ভিস মেসেজ দেখা যাচ্ছে । সাদিয়া মুহুর্তেই বুঝে গেল ব্যাপারটা । তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা ১২০ টাকা দাও তো !
দবির সাহেব বললেন
-কেন ?
সাদিয়া বলল
-বাবা দেখছো না কি পরিমান জ্যাম, তাই পাঠাও রাইড নিয়েছি । দাও না ১২০ টাকা ।দবির সাহেব কোন কথা না বলে পকেট থেকে ১২০ টাকা বের করে দিল । সাদিয়া সেটা রাকিবের হাতে ধরিয়ে দিল । তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তুমি কি বাসায় যাচ্ছো ?
-হ্যা ।
-আমিও যাবো । একটা কাজে বের হয়েছিলাম । চল ।দবির সাহেবকে খানিকটা দ্বিধাগ্রস্থ মনে হল তবে সে কোন কথা বলল না । তার মেয়ে যে অন্য মেয়েদের মত হয় নি এটা জেনে সে খুব আনন্দিত । সামনে বসা ছেলেটা আসলে পাঠাও ড্রাইভার । তার মেয়ে কোন ভাবেই অন্য কোন ছেলের সাথে ঘুরতে পারে না ।
সাদিয়াকে নিয়েই আবার রিক্সাতে উঠে বসলেন । একটু পরেই সিগনাল ছেড়ে দিল ।
সাদিয়া রিক্সায় চড়ার সময়ে আরেকবার রাকিবের দিকে তাকালো । রাকিব তখনও তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ভাগ্যভাল সময় মত বুদ্ধিটা বের করেছিলো । নয়তো আজকে ওর খবরই ছিল । আজকে তো আর দেখা হল না অন্য দিন রাকিবকে এর জন্য একটা আলাদা উপহার দিতে হবে !
=============
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।