হাসপাতালে

283 19 0
                                    

হাসপাতালের রুমে ঢুকতে গিয়ে গিয়ে খানিকটা সময় থেমে গেলেন কবির সাহেব। নিহাকে এই রুমেই রাখা হয়েছে। দরজায় কাঁচ লাগানো আছে। সেটা দিয়ে নিহাকে দেখা যাচ্ছে পরিস্কার। নিজের মেয়েকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে দেখাটা কোন বাবার পক্ষেই সহজ না। কিন্তু তবুও দেখতে হচ্ছে। না চাইলেও ভাগ্য মানুষকে মাঝে মাঝে এমন সব ঘটনার সামনে এনে ফেলে রাখে, যেখানে তার কিছুই করার থাকে না।

চারদিন আগে নিহা এক্সিডেন্ট করেছে। ক্যাম্পাস থেকে রিক্সা করে ফিরছিল। পেছন থেকে এক ট্রাক ধাক্কা দিয়েছে। প্রথম দুইদিন অবস্থা বেশ খারাপ ছিল তবে এখন একটু ভাল। এক হাত আর এক পা ভেঙ্গেছে। দুদিন একদমই নড়তে পারছিলো না। কাল রাত থেকে একটু ভাল।

কবির সাহেব মেয়ের জন্য অস্থির হয়ে আছেন সারাটা সময়। মেয়ের আশে পাশে থাকতে ইচ্ছে করছে সারাটা সময় তবে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কেবল একজন গেস্ট থাকতে দিচ্ছে হাসপাতালের লোকজন আর কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না ভিজিটিং আওয়ার ছাড়া। নিহার মা আছে ওর সাথে। কিন্তু মেয়েকে বারবার দেখতে মন চাইছে কবির সাহেবের৷
তাই তিনি চলে এসেছেন। এখন বেশ সকাল। হাসপাতালের সবাই সম্ভবত ঘুমিয়ে আছে। তিনি সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়েছেন। ধরা পড়ার সম্ভাবনা আছে তবে সেটা তিনি সামলে নিবেন।

দরজা খুলতে যাবেন তখনই তার স্ত্রী দরজা খুলে বের হয়ে এল। কবির সাহেবকে দেখে অবাক হল খানিকটা। তারপর বলল, যাক, তুমি এসেছো?
কবির সাহেব বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছিলে?
-অপু কে নিয়ে আসতে। তোমার মেয়ে দেখতে চাইছে ওকে।
কবির সাহেব ভুরু কুঁচকে বললেন, অপুটা আবার কে?
কবির সাহেবের স্ত্রী বলল, নিহার সাথে পড়ে। সম্ভবত নিহার বয়ফ্রেন্ড!

তার মেয়ের বয়ফ্রেন্ড কথাটা শুনতেই অবাক হয়ে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার স্ত্রী এতো সহজ ভাবে বলল যে নিহার দুই চারটা বয়ফ্রেন্ড থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। তিনি কি বলবেন বুঝতেই পারলেন না। তার স্ত্রী বলল, শোন রাগ কিংবা অবাক হওয়ার কিছু নেই। এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন ছেলেটাকে নিয়ে এসো। ছেলেটাকে কয়েকবার দেখেছি দরজা দিয়ে উকি দিতে৷ ভেতরে ঢুকতে সাহস হয় নি হয়তো! সম্ভবত চারদিন ধরে সে বাসায়ও যায় নি।
কবির সাহেব বললেন, তুমি এতো কিছু কিভাবে জানো?
-আমি জানি না। নিহা বলল। ও কিভাবে জানে, জানি না। তুমি নিয়ে এসো তো। রোগা পাতলা, চশমা পরে ছেলেটা। একটু লম্বা।

পরমানু গল্প গুচ্ছWhere stories live. Discover now