শশীর অস্থিরতা

198 10 0
                                    

সূর্যাস্ত থেকে গোধুলীর শেষটা পর্যন্ত আমাদের চারপাশটা দ্রুত রঙ বদলাতে। এই সময়টাতে মেয়েদের মাঝে এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা আর অস্থিরতা কাজ করে । তাদের তখন কিছু ভাল লাগে না । সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে যেদিক চোখ যায় সেদিকে চলে যেতে ইচ্ছে করে । শশীরও ঠিক এখন সেই ইচ্ছে করছে । ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে অজানার পথে পাড়ি দিতে । চেনা পথ ছেড়ে একবারে অচেনা এক পথে হাটতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু অবশ্যই অপুর হাতটা ধরে ।

গতকাল সারা রাত ও এক ফোটা ঘুমাতে পারে নি । দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি । চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পড়ে গেছে ওর । অপুর বলা কথা গুলো বুকের ভেতরে এতো তীব্র ভাবে আন্দোলিত করছে, এতো অস্থির করে তুলছে যে নিজেকে কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছে না ও ।

গতকাল বিকেলেই দেখা হয়েছিলো ওর সাথে । চুপচাপ বসে ছিল ওর পাশে । সুযোগ পেলেই অপু ওদের বাসার ছাদে চলে আসে । ছাদের চুপচাপ বসে থাকা যায় অনেক সময় । গতকালও এসেছিলো । হঠাৎ অপু ওর পাশ থেকে উঠে গিয়ে ওর সামনে এসে বসলো হাটু গেড়ে । অনেক দিন ধরেই অপু কিছু বলতে চাচ্ছে ওকে । শশী সেটা জানে । আজকে অপু বলেছিল সেটাই বলবে ওকে। অপুও বলার জন্যই এসেছে ।অপু সামনে বসে রইলো কিছু সময় । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বলল, আমি আসলে যেমন মেয়ে চাই, তুমি তেমনটা নও ।

লাইনটা শুনে বুকের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট হল শশীর । অপলক চোখে কেবল তাকিয়ে রইলো অপু দিকে । কি বলছে অপু? কেন বলছে এমন কথা ! অপু বলল, যেমন মেয়ের সাথে প্রেম করবো বলে স্বপ্ন দেখেছিলাম, যেমন মেয়েকে বিয়ে করবো ভেবে রেখেছিলাম তুমি তেমন নও ।

শশী কান্না চেপে কোন মতে বলল, তবে কেমন আমি?

অপু আরও কিছু সময় অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো শশীর দিকে । তারপর বলল, তুমি তার থেকেও বেশি কিছু । আমি কোন দিন স্বপ্নেও ভাবি নি তোমার মত কাউকে আমি আমার ভালোবাসার মানুষ হিসাবে পাবো। মনে হয় মনে হয় যেন .....

অপু একটু থামলো । ঠিক ভাবে যেন প্রকাশ করতে পারছে না নিজের মনের কথা । তারপর বলল, মনে হয় যেন আমার থেকে অনেক অনেক উপরে তুমি । এক সময় তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি হয়তো সব টুকু দিয়েও কোন দিন তোমাকে পরিপূর্ন ভাবে ভালোবাসতে পারবো না । তোমাকে হারিয়ে ফেলবো একদিন !

শশী অপুর চোখে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল । ছেলেটার চোখে সত্যিই ওকে হারানোর একটা ভয় দেখতে পাচ্ছে । চোখে অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছে ও । শশী অপুর কাছে নিজের মুখটা নিয়ে এল । তারপর বলল, তোমাকে কিছুতেই হারাতে দিবো না আমি । কিছুতেই না ।

খুব ইচ্ছে করছিলো অপুকে চুমু একটু চুমু খেতে কিন্তু সংকোচের কারণে পারলো না ।

রাতে অপুর ঐ চোখের কথা ভেবে শশী পুরো রাত কাটিয়ে দিল । এক ফোটা ঘুম এল না । আজকে সারাদিনও তাই । আর এখন এই সময়ে ওর মনটা তীব্র ভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে । যে কোন ভাবেই শশী এখন অপু সঙ্গ চায় ।

-হ্যালো !

-কি হয়েছে? কন্ঠ এমন কেন শোনাচ্ছে?

-তুমি কোথায়?

-বাসায় ? বাইরে যাবো একটু ।

-ছাদে এসো।

-এখন ? ছাদে তো এখন মানুষ থাকবে।

-থাকুক । তুমি এসো । এখনই এসো !

-আচ্ছা বাবা আসছি । কি হয়েছে? এমন কেন করছো?

-আসো জলদি ।

শশী ফোন রেখে ছাদের দিকে পা বাড়ালো । অপুকে যত সময় না সে জড়িয়ে ধরবে তার অস্থিরতা কমবে না । আজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে হবে অপুকে । কালকের অপূর্ণ ইচ্ছেটা আজকে পূরণ করতে হবে ।

শশী দ্রুত পা বাড়ালো ছাদের দিকে ।


পরমানু গল্প গুচ্ছDonde viven las historias. Descúbrelo ahora