-কি কাজটা করিস নি কেন ঠিক মত ?
জামান সাহেবের কান গরম হয়ে উঠলো । কাজে ভুল ভ্রান্তি হতে পারে । বস তাতে রাগ করতে পারে কিন্তু তাই বলে এই ভাবে তুই তুকারি করবে । তাও আবার বয়সে ছোট একজন । আগের বস তার থেকে বছর দশেকের বড় ছিল । সেও তাকে আপনি করে বলতো আর এই বস কি না তাকে তুই করে বলছে । আর তার ছেলে হয়ে কি না তার সাথে তুই তোকারি করছে !
জামান সাহেব ঠিক করে নিলেন । এই খানে আর চাকরি করবে না । ছেড়ে দিবেন । তবে তখনই কিছু বললেন না । মাথা নিচু করে সব শুনে গেলেন । তার বস বোরহান আহমেদ আরও কিছু সময় তাকে বকাঝকা করলেন । তুই তোকারি করলেন । তারপর তাকে আবারও কাজটা করে আনতে বললেন ।
জামান সাহেব নিজের ডেস্কে গিয়ে কাজটা ঠিক করলেন । তারপর নিজে একটা ইস্তফা পত্র লিখলেন । দুপুরে লাঞ্চের পরে কাজটা আবারও বসের কাছে বোরহান উদ্দিনের কাছে নিয়ে গেলেন । এইবার তার কাজটা ঠিক হয়েছে । বোরহান উদ্দিন একটু খুশি হয়ে বললেন, এইবার কাজটা ভাল করেছিস । যা মন দিয়ে কাজ কর গিয়ে ।
জামান সাহেব ভেবেছিলেন যে কাজে ভুল করার জন্যই হয়তো তাকে তুই তোকারি করছে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কাজ ভাল করেও সম্মান পাওয়া যাচ্ছে না । এবার ঠিক করেই নিলেন । আর কাজ করবেন না এই অফিসে । ব্যাংকে তার বেশ কিছু টাকা জমা আছে । গ্রামে কিছু জমিজমাও আছে । যদি আরেকটা চাকরি জোগার নাও করতে পারেন তাহলে দরকার হলে চাষাবাদ করবেন ।
ইস্তফা পত্রটা বোরহান উদ্দিনের সামনে দিয়ে দিলেন । ইস্তফা পত্রের দিকে তাকিয়ে কিছু সময় হাসলেন বোরহান উদ্দিন । তারপর বললেন, বস চেয়ারে !
জামান সাহেব বললেন, সরি স্যার আপনি বস হতে পারেন কিন্তু এই ভাবে আমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারেন না । আমি আর আপনার এখানে কাজ করবো না ।
রোহান উদ্দিন হাসলো আবার । তারপর বলল, বাহ আমি তুই তোকারি করছি সেটা পছন্দ হচ্ছে না কিন্তু তুই যখন করিস সেটা সমস্যা না ।
জামান সাহেব বললেন, মানে ? কি বলছেন ?
-বলছি ।
এই বলে সে ইন্টারকমে রশিদকে রুমের ভেতরে আসতে বললেন । একটু পরে রশিদ রুমের ভেতরে ঢুকললো । রোহান উদ্দিন বললেন, তোর বেতন কত ?
প্রশ্নটা জামান সাহেব কে করা হয়েছে ?
জামান সাহেব কিছু বুঝতে পারলেন না । তার বেতন কত বোরহান সাহেবের সেটা জানার কথা । তবুও যখন জিজ্ঞেস করছে জামান সাহেব বললেন, আমার বেতন হাজার পঞ্চাশেক ।
-আমার বেতন কত জানিস ? আমার বেতন হচ্ছে মাসে দুই লাখ টাকা । এটা আমি কোম্পানি থেকে নিই । এখন আমাকে বল তুই কত দুর পড়েছিস ?
জামান সাহেব এবারও কিছু বুঝতে পারলেন না । বললেন, মাস্টার্স শেষ করে ঢুকেছিলাম এই কোম্পানিতে ।
-আমি মাস্টার্সের পরেও এমবিএ করেছি দুইটা । তারপর আবার পিএইচডি আছে আমার ।
জামান সাহেব এবার বললেন, এসব বলে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন ? আপনি আমার থেকে বেশি আয় করেন, বেশি ডিগ্রি নিয়েছে তার মানে তো এই না যে আপনি আমাকে তুই করে বলবেন !
-এক্সেক্টলি ? আমি এটাই তোকে বোঝাতে চাইছি । রশিদের দিকে তাকা । ওর বেতন মাসে হাজার বিশেষ । পড়ালেখা করেছে ইন্টার মিডিয়েত । তোর থেকে বয়সে বড় । কেবল যদি পড়ালেখা আর বেতনের হিসাবে তুই ওকে তুই বলে ডাকতে পারিস আমি কেন সেই একই হিসাবে তোকে তুই বলে ডাকতে পারবো না ?
জামান সাহেব তীব্র বিস্ময় অনুভব করলেন । বললেন, কিন্তু স্যার ওর একটা অফিস সহ....
বোরহান উদ্দিন বললেন, ও ওর কাজ করছে । ঠিক যেমননি তুই তোর কাজ করছিস । তোর কাছে ওর পোস্ট যদি ছোট মনে হয় আমার কাছেও তোর পোস্ট ছোটই মনে হচ্ছে । তুই ওকে তুই বলতে পারলে আমি কেন তোকে তুই বলতে পারবো না ?
জামান সাহেব আসলেই কোন উত্তর দিতে পারলেন না । বোরহান উদ্দিন বললেন, যদি অর্থ বেশি আয় করিস কিংবা বড় পোস্টে চাকরি করিস বলেই যদি ওকে তুই বলার অধিকার রাখিস তাহলে তোর থেকে বেশি টাকা আয় করা বড় পোস্টে চাকরি করা মানুষও তোকে তুই বলার অধিকার রাখে।
জামান সাহেব মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলেন । বোরহান উদ্দিন তাকে কি শেখাতে চেয়েছিল সেটা সে বুঝতে পেরেছেন খুব ভাল ভাবে ।
বোরহান উদ্দিল ইস্তফা পত্রটা ছিড়ে ফেললেন । তারপর জামান সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, যান কাজ করুন । এরপর থেকে আপনি ঠিক সেই রকম আচরনই পাবেন যেমন টা আপনি অন্যের সাথে করবেন । বুঝতে পেরেছেন কি ?
জামান সাহেব বললেন, সরি স্যার আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি । আর ভুল হবে না ।
YOU ARE READING
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Short Storyমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।