গোলটা হওয়ার সাথে সাথে মিতুর মুখ দিয়ে আপনা আপনি চিৎকার বের হয়ে এল। নিজেকে ঠিক নিয়ন্ত্রন করতে পারে নি। কিন্তু চিৎকার দেওয়ার পর মনে হল কাজ টা ঠিক হয় নি। অপু এমনিতেই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ে আর খেলা ধুলার প্রতিও ওর খুব একটা আগ্রহ নেই। ও টিভিও খুব একটা দেখে না । নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে । অবসরে সে বই পড়ে । আর মাঝে মাঝে মিতুর সাথে বাইরে ঘুরতে যায় । অন্য কিছুতে তার আগ্রহ নেই ।
কিন্তু চিৎকার যখন দিয়েই ফেলেছে সেটা তো আর ফেরা নো যাবে না। কেবল দোয়া করলো যেন চিৎকারে যেন অপুর ঘুম না ভাঙ্গে।
কিন্তু কয়েক আধা মিনিটের মধ্যে যখন অপুকে ড্রয়িং রুমে হাজির হতে দেখলো তখন অবাক না হয়ে পারলো। প্রথমে অপুকে দেখেই মিতুর মনে হল ওর চিৎকার শুনেই হয়তো অপুর ঘুম ভেঙ্গেছে। কিন্তু ভুলটা ভাঙ্গলো তখনই যখন দেখতে পেল যে অপুর হাতে একটা বাটি। আর সব থেকে অবাক করা বিষয় হচ্ছে অপুর গায়ে একটা আর্জেন্টিনার জার্সি।
অপু খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওর পাশে এসে বসতে বসতে বলল
-কি মিস করলাম? গোল হয়ে গেছে?
মিতু ততক্ষণে খেলা দেখার কথা ভুলে গেছে। অপুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-তুমি.....
-আমি কি?
-তুমি আর্জেন্টিনার ফ্যান হলে কবে থেকে?
অপু হাসলো। কিন্তু জবাব দিল না। কেবল বাটিটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিল। তারপর বলল
-খেলার সময় এতো কথা বলতে হয় না ।
মিতু কেবল তাকিয়ে দেখলো বাটির ভেতরে গরম গরম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ভাজা রয়েছে । মাত্রই ভাজা হয়েছে দেখলেই বুঝতে পারছে । মিতু খেলার ভেতরে এমনই ডুবে ছিল যে বুঝতেই পারে নি অপু কখন রান্না ঘরে গিয়ে এসব ভেজে নিয়ে এসেছে । অপু বলল
-তোমার জন্য কিছু নিয়ে এসেছি ।
-কোথায় ?
-এখানে না । দেখো শোবার ঘরে আছে । এক দৌড় দিয়ে নিয়ে এসো ।
মিতু ঠিক বুঝতে পারছিলো না কি হতে পারে সেটা । তার আর দেরি করলো না । এক দৌড় দিয়ে চলে গেল শোবার ঘরে । সেখানেই দেখতে পেল বিছানার উপরে একটা আর্জেন্টিনার জার্সি রাখা । তার উপর একটা ছোট্ট নোট
"প্রিয়দল হেরে গেলেও এখন আর একা একা মন খারাপ করতে দেবো না তোমাকে । দুজন মিলে এক সাথে মন খারাপ করবো"
সত্যিই আগের দিন যখন আর্জেন্টিনা হেরে গিয়েছিলো মিতুর মনটা সারাদিন খারাপ ছিল । কিছুতেই সেই মন খারাপ ভাব থেকে নিজেকে বের করতে পারছিলো না । আজকে এই খেলাতেও সারাটা সময় কেবল চিন্তায় ছিল যে আজকে আবার জিততে পারবে তো । নাকি প্রথম পর্ব থেকেই বাদ চলে যাবে । কিন্তু এখন এই অপুর এই ছোট্ট কাজে তার মন ভাল হয়ে গেল মুহুর্তেই । সেই সাথে মনের সেই দুশ্চিন্তাও কেন জানি একবারেই দুর হয়ে গেল ।
আবার যখন জার্সি পরে মিতু টিভির ঘরে হাজির হল তখন খেলা জমে উঠেছে । ও অপুর পাশে বসে পড়লো । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে যদি ম্যাচ হেরেও যায় তবুও আজকে মন খারাপ হবে না ।
-হবে না ?
-হুম । আজকে তুমি পাশে আছো না ?
-আমি তো সব সময়ই থাকি তোমার পাশে !
মিতু হাসলো । সত্যিই অপু সব সময়ই ওর পাশেই থাকে । হ্যা এটা সত্যি যে ও খুব একটা রোমান্টিক না । কিন্তু সে কেয়ারলেসও না । বরং মিতুর প্রতি খুবই য্ত্নবান । তাই তো প্রথম প্রথম মিতু এই বিয়েতে খুব একটা খুশি ছিল না কিন্তু কিছুদিন অপুর সাথে থাকার পর থেকেই বুঝতে পারে যে তার স্বামী একজন অন্য রকম মানুষ । সবার ভাগ্যে এমন স্বামী জোটে না । সেটা সে আজকে আবারও প্রমান করলো ।
খেলা ভালই চলছিলো । অপু মাঝে মাঝেই মিতুকে বিভিন্ন মন্তব্য করে হাসাচ্ছিলো । বিশেষ করে যখন নাইজেরিয়া একটা গোল শোধ করে দিল তখন থেকে মিতুকে চিয়ারআপ করার চেষ্টা করছিলো । খেলা যখন প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু গোল হচ্ছে তখন মিতু অপুর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর নিজের থেকে অপুর চেহারাতে বেশি টেনশন কাজ করছে । এমন একটা ভাব যেন অপু কত দিন থেকেই না ফুটবলের ভক্ত ।
তারপর যখনই শেষ মুহুর্তে গোলটা হল ওরা দুজনই চিৎকার দিয়ে উঠলো । সেই সাথে আশে পাশের অনেক চিৎকার করে উঠেছে । মিতু আনন্দে অপুকে শক্ত করে জড়িয়েই ধরলো । তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে শক্ত করে একটা চুমু খেয়ে ফেলল ।
খেলার উত্তেজনা শেষ হতেই অনুভব করলো একটা তীব্র লজ্জা বোধ হচ্ছে । এমন কি অপুর দিকে ঠিক মত তাকাতেও পারছে না । তবে সেটা নিয়ে সে খুব একটা চিন্তিত বোধ করছে না । কেবল পুরো মন জুড়ে একটা অজানা ভাল লাগা বয়ে বেড়াচ্ছে ।
ВЫ ЧИТАЕТЕ
পরমানু গল্প গুচ্ছ
Короткий рассказমাঝে মাঝে জীবনের গল্প বলতে হাজার শব্দ লাগে না। মাত্র অল্প কয়েকটা লাইন দিয়েই বলা হয়ে যায় পুরো গল্প। পরমানু অনু গল্প গল্প গুলো এমনই। ছোট গল্পের জগতে আপনাকে স্বাগতম ।